জামালপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর নদের বুকে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে গর্জে উঠল বাংলার বাঘ, সোনার তরী, হীরার তরী ও মনিরাজসহ ১৫টি নৌকার বৈঠা। গত শনিবার বিকালে পৌরসভার ছনকান্দা এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। এতে প্রথমদিনের মতো জামালপুর-শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার দর্শকের ঢল নামে নদীর দুইপাড়ে। স্থানীয় ও আয়োজক কমিটি সূত্র জানায়, একসময় প্রতিবছরই এই নদে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু বিশ্বায়নের এই যুগে এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই অনুষ্ঠান। দীর্ঘদিন পর দুই দিনব্যাপী জামালপুর পৌরসভা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সার্বিক সহযোগিতায় এই নৌকাবাইচের আয়োজন করে ঢাকাস্থ জামালপুর সমিতি। প্রতিযোগিতার প্রথমদিন জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মোট ১৫টি নৌকা অংশ নেয়।
আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় শনিবার বিকালে। এ সময় ব্রহ্মপুত্র নদের দুইপাড় ও ব্রিজের রেলিং এবং নৌকায় চড়ে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। বাইচ উপলক্ষ্যে সকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের খাবার ও খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। এতে মিলনমেলায় পরিণত হয় নদের দুইপাড়।
১৫টি নৌকা থেকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এতে প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেড় লাখ টাকা এবং রানারআপ হিসেবে ১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা তানভীর ইসলাম, জুয়েল রানা, সাব্বির হোসেন, আমিনুল ইসলামসহ আরো অনেকে বলেন, একসময় জেলার বিভিন্ন জায়গায় এই নৌকাবাইচের আয়োজন করা হতো। এখন আর এই প্রতিযোগিতা তেমন একটা দেখা যায় না। বর্ষায় পানি না থাকা, অবৈধভাবে নদী দখলসহ বিভিন্ন কারণে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে মানুষের মাঝে উৎসাহ কমেনি। তারই প্রতিফলন আজকের এই হাজার মানুষের সমাগম। গতকাল থেকেই এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আজ মূল পর্ব অনুষ্ঠিত হলো। আমরা চাই প্রতিবছর যেন এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক কমিটির সদস্য ও মেলান্দহ উপজেলার মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘরের ট্রাস্টি হিল্লোল সরকার বলেন, নৌকাবাইচ হচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। এটি যেন হারিয়ে না যায়, সে কারণেই মূলত তাদের এই আয়োজন। এ আয়োজনকে ঘিরে মানুষের এমন উৎসাহ-উদ্দীপনা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমাদের ইচ্ছা প্রতিবছর এখানে নৌকাবাইচের আয়োজন করার। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ঢাকাস্থ জামালপুর সমিতির সভাপতি হাসান মাহমুদ রাজার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম এমপি। উদ্বোধন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. ইমরান আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ, পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, জামালপুর পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু।