ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাতপাখায় সংসার চলে শতাধিক পরিবারের

হাতপাখায় সংসার চলে শতাধিক পরিবারের

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের একটি অজপাড়াগাঁ পারিয়াট। বর্তমানে এই গ্রামের শতাধিক পরিবার তালপাখা বা হাতপাখা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। প্রায় শত বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম থেকে এ পেশা চলে আসছে। গরমের সময় পাখার অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় পুরো বছরজুড়ে চলে পাখা তৈরির কাজ। সরেজমিনে পারিয়াট গ্রামে দেখা যায়, সকাল থেকেই শুরু হয় ব্যস্ততা। যেখানে চোখ যায়, সেখানেই দেখা যায় কেউ পাতা কেটে সাইজ করছে, কেউ বাঁশ থেকে শলা সংগ্রহ করছে, কেউবা সেলাই করছে আবার কেউ সুতা ও বাঁশের শলাতে রং করায় ব্যস্ত। মূলত শীতের সময় জেলা ও জেলার বাইরে থেকে চলে তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর কারিগররা সেই তালপাতাকে কেটেছেঁটে পানিতে ডুবিয়ে নরম করে মূল পাখার আকৃতিতে নিয়ে আসে। তারপর চলে পাখা বাঁধার কাজ। অত্যন্ত নিপুণ হাতে করতে হয়, এই পাখা তৈরির কাজ। একেকটি তালপাখা তৈরিতে খরচ ১২ থেকে ১৫ টাকা হলেও তালপাখার চাহিদা অনুপাতে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন ব্যাপারী ও বাজারে বিক্রির মাধ্যমে এই পাখা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। পারিয়াট গ্রামের নুরুদ্দিন বিশ্বাস-শিউলি বেগম দম্পতি। পাখা তৈরি করেই চলে তাদের সংসার। এই দম্পতি এ পেশায় রয়েছে কমপক্ষে ৪০ বছর ধরে। নুরুদ্দিন বিশ্বাস গনমাধ্যমকে বলেন, বাবা-দাদারা এই কাজ করে গেছেন। তাদের থেকেই তিনি এই কাজ শিখেছেন। তাদের কাছে এটি একটি শিল্প। বিভিন্ন জেলা থেকে তালপাতা ক্রয় করে নিয়ে আসেন। পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে একটি পাখা তৈরি করা হয়। একটি পাখা তৈরি করতে ১০ থেকে ১৫ টাকা খরচ হয়। পাইকারিভাবে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত পাখা বিক্রয় করা হয়। কোনো সময় এর থেকে বেশিও হয়।

শিউলী বেগম বলেন, বাড়ির পুরুষরা পাতা কেটে নিয়ে আসেন। পরে সেগুলোকে রোদে শুকিয়ে পানিতে পচাতে হয়। পচে গেলে সেগুলোকে আবার শুকাতে হয়। তারপর পাখার আকার দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাঁশের শলা রং দিয়ে সুতা বাঁধতে হয়। এখন পারিয়াট গ্রামকে সবাই পাখা গ্রাম বলেই চিনে। কালিগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল আজাদ বলেন, পারিয়াট গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পাখা তৈরির এই পেশার সঙ্গে জড়িত। যুগের পর যুগ ধরে এই পেশা চলে আসছে। তারা যদি সরকারি ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণ পেত, তাহলে ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত