ভয়ঙ্কর জনপদের নাম সখীপুর!

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ইসমাইল হোসেন, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

খুন, ধর্ষণ, মাদক, মারামারি, চুরি, ছিনতাই, যৌনহয়রানি, অপহরণ, বাল্যবিয়ে, জমি দখল বেড়েই চলছে সখীপুরে। এ উপজেলাটি বর্তমানে অপরাধের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলাজুড়ে বিগত ২ মাসে ১০ থেকে ১৫ জন আত্মহত্যা এবং পাঁচজন ভয়াবহ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে বাঘেরবাড়ি গ্রামে রাতের আঁধারে চাচা মজনু মিয়া ও ভাতিজা শাহজালালকে কুঁপিয়ে হত্যা করা হয়। পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই ইউনিয়নের ছোটচওনা গ্রামে আলমিনা নামের তরুণীর মরদেহ পাওয়া যায়। আল মিনার দাদা টেপু মিয়ার দাবি, তার নাতিকে হত্যা করে পোলট্রি লেয়ারের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে নিখোঁজের একদিন পর বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জমি থেকে আরফান আলী (৬০) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে উপজেলার হতেয়া উলিয়ারচালা গ্রাম থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের ধারণা তাকে হত্যা করা হয়েছে। গেল ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার অপহরণের দুই দিন পর তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়ার (৯) লাশ বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বনের ভেতর একটি ড্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়। সামিয়া দাড়িয়াপুর গ্রামের রঞ্জু মিয়ার মেয়ে। অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের সেই টাকা দিতে না পারায় লাশ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরতে হলো শিশু সামিয়াকে। এই ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। জানা গেছে, গেল ৩ আগস্ট স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। উপজেলার কচুয়া চাঁদেরহাট এলাকার একটি জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই এলাকার ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বর্তমানে তারা প্রায় সবাই জামিনে মুক্ত রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার এক কলেজছাত্রী (১৯) নাতিকে ব্লাকমেইল করে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সম্পর্ক করে আসছে তার দাদা (দাদির দ্বিতীয় স্বামী)। ওই ছাত্রী বর্তমানে তার এক খালার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার দাবি সেখানেও লম্পট দাদা তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল ২ মাসে বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এ নিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে ২২ আগস্ট উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের রামখা এলাকার প্রবাসী নুরু মিয়ার বাড়িতে ভয়ঙ্কর চুরির ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় নগদ ১৬ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণলঙ্কার চুরি করে। এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আরিফুর রহমান আরিফ নামের এক চিকিৎসক বলেন, সখীপুর এখন অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, সমাজপতিরা এ দায় এড়াতে পারে না। হতেয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মোজাম্মেল হক সজল বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের আরো সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, শুধু সখীপুরে নয়, সারাদেশেই অপরাধ বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে অনেক ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। অপরাধীরা অপরাধ করে পার পাবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলম বলেন, যৌথ অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।