শ্যামনগরে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়ি

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমগীর সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় অবস্থিত ৪০০ বছরের পুরোনো নকিপুর জমিদারবাড়ি আজও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা আসছেন বাড়িটি দেখতে। জানা যায়, জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরী ১৮৮৮ সালে ৪১ কক্ষের তিনতলা বিশিষ্ট এল প্যার্টানের এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে শ্যামনগর থানা সদরের দুই কিলোমিটার আগে তিন বিঘা জমির উপর বাড়িটির অবস্থান। যার বাউন্ডারি ছিল প্রায় দেড় হাত চওড়া প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। সদর পথে ছিল একটি বড় গেট বা সিংহদ্বার। সামনে ছিল একটি শান বাঁধানো বড় পুকুর। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহেও তা শুকায় না। পুকুরঘাটের বাম পাশে ৩৬ ইঞ্চি সিঁড়ি বিশিষ্ট দ্বিতল নহবত খানা। আটটি স্তম্ভ বিশিষ্ট এই নহবত খানার ধ্বংসাবশেষটি এখনো প্রায় অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থেকে কালের সাক্ষ্য বহন করছে। বাগানবাড়িসহ মোট ১২ বিঘা জমির উপর জমিদারবাড়িটি প্রতিষ্ঠিত ছিল। সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই সামনে সিঁড়ির ঘর। নিচ তলায় অফিস ও নানা দেব-দেবীর পূজার ঘর। এছাড়া নিচ তলায় ১৭টি এবং উপর তলায় ৫টি কক্ষ ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ভবনটির দৈর্ঘ্য ২১০ ফুট, প্রস্থ ৩৭ ফুট। চন্দন কাঠের খাট-পালঙ্ক, শাল, সেগুন, লোহার দরজা-জানালা, কড়ি, ১০ ইঞ্চি পুরু চুন-সুরকির ছাদ, মেজেতে রয়েছে বিভিন্ন নকশা করা বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় এখন ও সোভা পাচ্ছে একটি বড় লোহার সিন্দুক। বাড়িতে ঢুকতে ৪টি গেট ছিল। প্রতিটি ছিল ২০ ফুট দূরত্বে। জমিদার পরিবার ভারতে চলে যাওয়ার পর বর্তমানে বাড়িটির আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজা প্রতাপাদিত্যের পরে হরিচরণ রায় ছিলেন শ্যামনগর অঞ্চলের প্রভাবশালী ও বিত্তশালী জমিদার। তার উদ্যোগে সমগ্র সাতক্ষীরায় অনেক জনহিতকর কাজ হয়েছিল। ১৯১৫ সালে জমিদার হরিচরণ মারা গেলে তার জমিদারির ভার পড়ে দুই ছেলের ওপর। ১৯৩৭ ও ১৯৪৯ সালে দুই ছেলে মারা যান। এরপর ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথার অবসান ঘটে। তখন জমিদারের বংশধর তাদের সম্পত্তি রেখে ভারতে পাড়ি জমান। সেই থেকে পড়ে আছে জমিদার বাড়িটি। জমিদার বাড়ির সব জিনিসপত্র চলে গেছে লুটেরাদের দখলে। শ্যামনগরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান বলেন, এরই মধ্যে জমিদারবাড়ির অবৈধ দখলকারীদের স্বউদ্যোগে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে আদালতে মামলা থাকায় একজনকে উচ্ছেদ করা যায়নি। তিনি আরো বলেন, সাবেক বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ এর আগে উপজেলার ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স্থান সংরক্ষণের জন্য ভূমি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। তারই নির্দেশে নকিপুর জমিদারবাড়িটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, নকিপুর জমিদারবাড়িটি সাতক্ষীরার একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান। ৪০০ বছর আগের জমিদার বংশের গৌরবময় ঐতিহ্যের নানা নিদর্শন পাওয়া যায় এ বাড়িতে।