ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইছামতী নদীর তীরে ২০০ বছরের পুরোনো নৌকার হাট

ইছামতী নদীর তীরে ২০০ বছরের পুরোনো নৌকার হাট

বেশ কয়েকটি নদী আর অসংখ্য খাল-বিলের জেলা মুন্সীগঞ্জ। দেশের প্রাচীনতম আড়িয়াল বিলের অবস্থানও এই জেলায়। যে কারণে বর্ষার আগমনে জেলার বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ, পথঘাট জলরাশিতে টইটম্বুর। এ সময় যাতায়াত, মাছ শিকারসহ নানা কাজে প্রয়োজনীয় বাহন হয়ে ওঠে কোষা নৌকা। বিভিন্ন হাটবাজারে কেনাবেচা হয় এ নৌকা। এর মধ্যে জেলার সবচেয়ে বড় নৌকার হাটের দেখা মেলে শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের শিবরামপুরে ইছামতি নদীর তীরে। এ নৌকার হাট ২০০ বছরের পুরোনো। বর্ষায় ফের জমে উঠেছে হাট। সপ্তাহের প্রতি শনিবার কোষা নৌকার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর থাকে প্রাচীন এ হাট। সরেজমিন দেখা যায়, ইছামতি নদীর তীরের ওই স্থানটিতে বিভিন্ন আকারের কোষা নৌকা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে দরদাম। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জ থেকেও এসেছেন ক্রেতারা। ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে একেকটি নৌকা। হাটবার ভোর থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। জানা যায়, স্থানীয় খারসুর এলাকার জয়কৃষ্ণ, শিবরামপুরের প্রেমানন্দ, মন্টুসহ অনেক পরিবার বংশপরম্পরায় এ হাটে নৌকা বিক্রির সঙ্গে জড়িত। পণ্য পরিবহণসহ বর্ষায় এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হয় কোষা নৌকা। এছাড়া আড়িয়ল বিলসহ বিভিন্ন খাল-বিলে মাছ ধরা, শাপলা তোলা, গৃহপালিত প্রাণীর জন্য গো-খাদ্য আহরণে ব্যবহার হয় এসব নৌকা। ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে নৌকা নিয়ে হাটে আসা চাঁন শিবু মণ্ডল বলেন, আমার বাপ-দাদা এ হাটে নৌকা বিক্রি করেছে। আমরাও এ হাটে নৌকা বিক্রি করতে আইছি। তবে এখন কাঠের মূল্যবৃদ্ধিতে নৌকা বানানোর খরচ বেড়েছে। এছাড়া আগে লোক কম আছিল। এখন লোক বেশি। যে নৌকা বানাইতে খরচ হয় ২ হাজার ৫০০ টাকা, ক্রেতারা দাম বলে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। স্থানীয় বাড়ৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. রাজিব শেখ বলেন, শতশত বছর ধরে এই হাট চলছে। স্থানীয় অনেক মিস্ত্রিই বংশ পরম্পরায় নৌকা তৈরি ও বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করেন। পাকিস্তান ও বিট্রিশ আমলে এই হাট আরো জমজমাট ছিল। তখন রাস্তাঘাট কম ছিল, নৌকার চাহিদা বেশি ছিল। শিবরামপুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রতি হাটে এক-দেড়শ নৌকা ওঠে। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০টি বিক্রি হয়। আগে চারদিকে পানি বেশি হতো তখন নৌকার কেনাবেচাও বেশি হতো। ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও প্রতি হাটে দেড়-দুইশ নৌকা বিক্রি হতো, এখন পানি কম তাই বেচাবিক্রি কমেছে। এর পরও এই হাট টিকে আছে। হাটে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে আগের মতো খাল-বিলে পানি হয় না, এটাই সমস্যা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত