ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মোরেলগঞ্জে দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া

দিশাহারা নিম্ন আয়ের মানুষ
মোরেলগঞ্জে দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বেপরোয় হয়ে উঠেছে কাঁচাবাজার সিন্ডেকেট চক্র। তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে পৌর শহরের প্রায় লক্ষাধিক বাসিন্দা। ১৫ সদস্যের এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার। তাদের লাগামহীন মুনফার কারণে কয়েকগুণ চড়ামূল্যে কাঁচাবাজার ও তরিতরকারি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ এখানকার ক্রেতা সাধারণ। এ চক্রের বিরুদ্ধে যে কেউ মুখ খুললে হেনস্তার শিকার হতে হয়। নিয়মিত মাজার মনিটরিং না থাকায় সংঘবদ্ধ এ চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়েইে চলছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন কাঁচামাল সিন্ডিকেটের অবৈধ কারবার চলছে। তাই এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকরী তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন ভোক্তা বলেন, রাম রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে এরা অল্পতেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার মতো বিপুল অর্থ-বৃত্তের মালিক বনেছেন। আর চড়া দামে কাঁচা তরিতরকারি কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। জানা গেছে, বিশ্ব ঐতিহ্য পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ পূর্ব সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ও আশপাশের এলাকায় মৌসুমি কাঁচামালের উৎপাদন তেমন নেই। আর চাহিদার তুলনায় উৎপাদন না থাকায় মোরেলগঞ্জ পৌর কেন্দ্রিক নিত্যপণ্যের কাঁচাবাজারকে ঘিরে বিগত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট চক্র। এ চক্রের সদস্যরা হলেন- আব্দুর রশিদ ফকির, হারুনআর রশিদ, তুজাম্বর মেম্বার, আল আমিন নজরুল তালুকদার, রফিক, আলু আলম, ফিরোজ, সুমন, কবির, কামরুল, নজরুল, জাহিদ, নাসির ও কালু। গ্রামের গৃহস্থ চাষিরা বাজারে এলে তাদের নিয়মিত বাজারে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার-এ ২ দিন গ্রামের কৃষকরা তরকারি বিক্রি করতে দেওয়া হলেও অন্য পাঁচ দিন তাদের সবজি বিক্রি করা নিষিদ্ধ থাকে। কারণ গ্রামের কৃষক কিছুটা কম দামে সবজি বিক্রি করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কৃষকরা বাজারে এলে সিন্ডিকেট চক্রটি তাদের মালামাল কেড়ে নিয়ে ইচ্ছামতো দাম ধরিয়ে দিয়ে তাদের বিদায় করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্রব্য মূল্যের আকাশছোঁয়া দামে দিশাহারা হয়ে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। বাজারে কাঁচা মালের মালামালের সরবরাহ ঠিক থাকলেও দিগুণ-তিনগুণ দামে। হু হু করে বাড়েছে পণ্যের দাম। মোরেলগঞ্জ কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা রেজাউল হাওলাদার, এইচএম আসলাম হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও সাথী ইসলাম বলেন, সকাল-বিকাল নিত্যপণ্যের দাম ওঠা-নামা করে এখানে। সিন্ডেকেটের বেঁধে দেয়া মূল্যে সব দোকানেই কাঁচামাল বিক্রি হয়। আর বিক্রি না হলে ফেলে দেয়া হয় ড্রেনে। সরবরাহ থাকলেও দাম কমে না। মাংসের বাজারে ও দাম বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি আকারভেদে কেজিপ্রতি ১৮৫ টাকা, কক মুরগি ৩২০ টাকা কেজি, রুই মাছ ৫০০ টাকা কেজি, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ২২০০ টাকা কেজি আর ৭০০ গ্রাম ওজনের ১২০০ টাকা কেজি। এছাড়া, নদীর চিংড়ি আকারভেদে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি। এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই, সবই উড়ো কথা। তারা পাইকারিতে যে দামে পণ্য কেনেন, তার চেয়ে সামান্য বেশি দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। উপজেলা বাজার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তারেক সুলতান বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও নিয়মিত বৈঠক করা হয় যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায় থাকে। এছাড়া অভিযোগ উঠলেই অভিযান পরিচালনা ও জরিমানাও করা হয়। এছাড়া রশিদের মাধ্যমে ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বিক্রেতা ও ক্রেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত