ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাটে নয়, পাটকাঠিতে স্বস্তি

পাটে নয়, পাটকাঠিতে স্বস্তি

এ বছর মেহেরপুরে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু পাটের দাম কৃষককে লোকসানের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তবে কৃষকের মুখে কিছুটা স্বস্তির হাসি ফুটিয়েছে পাঠকাঠি। পাটের দাম খুব একটা ভালো না পেলেও পাটকাঠির দাম দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। এ কারণে এখন মেহেরপুরের অলি গলিতে, পাকা সড়ক, মাঠঘাট যেখানে চোখ যায়, সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের আয়োজন। জানা যায়, পাটকাঠি আগের মতো অবহেলায় ফেলে না রেখে যত্ন করে শুকিয়ে মাচা তৈরি করে রাখছেন চাষিরা। স্থানীয়রা জানান, পাটকাঠি কোথাও আবার পাটখড়ি নামেও পরিচিত। আগে সস্তা জ্বালানির বাইরে পাটকাঠির তেমন ব্যবহার ছিল না। আর কিছু ভালোমানের পাটকাঠি পানের বরজে আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার হতো। কিন্তু এখন আর এটি মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না। বাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় আঁশের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়। মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম জানান, পাটকাঠি একসময় শুধু রান্না-বান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া ও ছাউনির কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন এ পাটকাঠি পানের বরজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বাইরের জেলা থেকেও ব্যবসায়ীরা পাটকাঠি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের পাট চাষি মজনুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগেও পাটখড়ির তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন বেশ চাহিদা। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনছেন, ভালো দামও দিচ্ছেন। ১০০ মোঠা পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। শুধু পাট বিক্রি করেই নয়, এবার পাটখড়িও আমাদের এলাকায় কৃষকদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। সদর উপজেলার দিঘীরপাড়া গ্রামের মোস্তাকিম বলেন, এ বছর পাট চাষ করে খরচ উঠছে না। জাগ দেওয়ার জন্য পুকুর খরচ, শ্রমিকের খরচ দিতে গিয়ে চাষি গেরস্তদের কিছু নেই। এখন পাটকাঠি বিক্রি করে যা পাওয়া যায়! পাটকাঠির এবার দাম বেশি। কারণ এলাকার মানুষ নয়, বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজনরা এসে পাটকাঠি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরা এলাকা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও সামসুর রহমান জানান, তারা পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছেন তিনি। আগে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটকাঠি কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন তারা। এখন জেলায় প্রায় এক ডজন কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের পাটকাঠি দিয়ে এসব ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটানোই কষ্টসাধ্য। তাই তারা এসেছেন মেহেরপুর, কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে পাটকাঠি কিনতে। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, জেলায় এবার মোট ২১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের রং না আসায় এবং বড় কিছু মিল বন্ধ থাকার কারণে পাটের বাজারে দাম কম। এতে কৃষকও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে এ পাটকাঠি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত