ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আলুচাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা

আলুচাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা

একসময়ের আলু উৎপাদনের শীর্ষে থাকা জেলা মুন্সীগঞ্জের উৎপাদিত আলু, দেশের মোট আলুর চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। তবে কয়েক বছরের ব্যবধানে জেলায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে আলুর উৎপাদন। যুগ যুগ ধরে রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদনের যে সুখ্যাতি ছিল মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের তা এখন শুধুই স্মৃতি। কৃষক পর্যায়ে বছরের পর বছর ধরে জমি থেকে আলু উত্তোলন শেষে বিক্রির পর কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে ভারি হয়েছে লোকসানের পাল্লা। এতে আলুর চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় আলু চাষিরা। পুঁজি হারিয়ে পেশা বদল করেছেন অনেকেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭৯০০ হেক্টর জমিতে, আবাদ হয়েছে ৩৫৭৯৬ হেক্টর জমিতে। ২০২১ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮৫০০ হেক্টর জমিতে, আবাদ হয়েছে ৩৭৮৫০ হেক্টর জমিতে। ২০২০ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬৪৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে ৩৭৫৯০ হেক্টর জমিতে। ২০১৯ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮৮০০ হেক্টর জমিতে, আবাদ হয়েছে ৩৮৯০০ হেক্টর জমিতে। প্রতিবছর গড়ে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয় মুন্সীগঞ্জে। জেলার ৬৮টি কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। তাই উৎপাদিত বাকি আলু নিয়ে প্রতিবছরই কৃষকের হিমশিম খেতে হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে আরো জানা যায়, জেলার ৬৭টি হিমাগারের মধ্যে বর্তমানে সচল থাকা ৬৩টি হিমাগারে (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত মজুদ রয়েছে তিন লাখ ২১ হাজার ২১১ মেট্রিক টন আলু। এর মধ্যে খাবার আলু মজুদ রয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৮৫২ মেট্রিক টন। আর বীজ আলুর মজুদ রয়েছে ৭৭ হাজার ৫৮১ মেট্রিন টন। খুচরা বাজারে কয়েক দফা মূল্য বৃদ্ধির পর বিগত তিন মাসে হিমাগার থেকে বাজারজাত হয়েছে ৫৫ হাজার ১৮৮ মেট্রিন টন আলু। গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন সদর উপজেলার মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট ও চর মুক্তারপুর এলাকায়, বিক্রমপুর মাল্টিপারপাস কোল্ডস্টোরেজ, রিভারভিউ, কদম রসুল, এলাইট, নিপ্পন, দেওয়ান আইস, নিসান ও টঙ্গীবাড়ী কোল্ডস্টোরেজসহ আরো বেশ কয়েকটি হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, এসব হিমাগারে এখনো সংরক্ষিত বিপুল পরিমাণ আলুর পাইকারি বেচাকেনা অব্যাহত রয়েছে। হিমাগারের ভেতরে সংরক্ষিত আলুর বাছাই প্রক্রিয়া শেষে বস্তাবন্দি করছেন শ্রমিকরা। হিমাগারগুলোতে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৭ টাকা পর্যন্ত। এতে ৫০ কেজি ওজনের প্রতিটি বস্তার দাম পড়েছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা। অথচ হিমাগারগুলো থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরের কাঁচামাল বিক্রির বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একই আলু সেখানে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে। অর্থাৎ পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজিতে নয় থেকে ১৩ টাকা খুচরা বাজারে বাড়তি দাম দিয়ে ভোক্তাদের খেতে হচ্ছে প্রতিদিনের খাবারের অন্যতম অনুষঙ্গ এই খাবার। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, আলু রোপণ মৌসুম থেকে শুরু করে উত্তোলন পর্যন্ত, কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। তবে কৃষকদের আলু বিক্রি করে দেওয়ার পর ফরিয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই কৃষি বিভাগের। কিন্তু জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, ভোক্তা পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ পেলেই নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪৫ ধারায়, কোনো লিখিত অভিযোগ পেলেই বাজারগুলোতে অভিযান চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে আইনগত ব্যবস্থা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত