ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ

হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ

‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ চিরায়ত এই কথাটি এখন আর কাউকে খুব একটা বলতে শোনা যায় না। দেশের হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল, নদী-নালায় একসময় মিঠাপানির দেশি প্রজাতির মাছ প্রচুর পাওয়া যেত। এখন আর সেসব মাছ খুব বেশি দেখা যায় না। গত কয়েক দশকে দেশি প্রজাতির অনেক মাছই হারিয়ে যেতে বসেছে। মৌলভীবাজারে বর্ষা মৌসুমে নদী, নালা, হাওর ও জলাশয়ে কাঙ্ক্ষিত পানি নেই। পানির অভাবে দেশি মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে পানি কম হওয়ায় মাছের প্রজনন কমে গেছে। একই সঙ্গে আগের তুলনায় দেশি জাতের অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে হাইব্রিড মাছের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে হাইব্রিড প্রজাতির মাছের সরবরাহ ও বিক্রি বেড়েই চলেছে। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় ২৬০ প্রজাতির দেশি মাছ ছিল। বর্তমানে প্রায় ১০০ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অনাবৃষ্টির কারণে নদী ও হাওরে পানির অভাবে দেশীয় মাছের সংকট হচ্ছে। একই সঙ্গে নদী ও জলাশয়ে বিষ প্রয়োগ করে মাছের প্রজনন নষ্ট করা ও বিভিন্ন নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে মাছ শিকারের কারণে দেশি মাছ কমে গেছে। হাওরপাড়ের বাসিন্দারা জানান, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে জেলার কাওয়া দিঘি হাওরাঞ্চল এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। ছোট-বড় সব নালা, খালও পানিতে ভরপুর থাকে। তবে এবার প্রাকৃতিক কারণে ভরা বর্ষা ঋতুতেও পরিমাণ মতো বৃষ্টি হয়নি। ফলে হাওরে পর্যাপ্ত পানি আসেনি। যার প্রভাব পড়েছে বিলের মাছের ওপর। হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এ বছর তীব্র তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত দেরিতে হওয়ায় হাওরে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি হয়নি।

এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কমের কারণে হাওরে পানি কম। বর্ষার শুরুতে বেড়জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মা মাছ নিধনের ফলেও বিলুপ্ত হচ্ছে দেশি মাছ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার জাতীয় পরিষদ সদস্য আসম সালেহ সোহেল বলেন, এখন হাওর আর হাওর নেই।

হাওর এখন কৃষিজমি হয়ে গেছে। মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কাঙ্ক্ষিত পানির অভাবে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন খাল-বিল নদী-নালা ভরাট হওয়ার কারণেও মাছের প্রজনন হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু মাছ নয়, মাছের পাশাপাশি জলজ প্রাণীগুলোও বিলুপ্ত হচ্ছে। রাজনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মীর আলতাফ হোসাইন বলেন, কাউয়া দিঘি হাওরে পোনা মাছ ধরার বিষয়টি জেনেছি। আমরা এর আগে হাওর পারের জেলেদের সচেতন করার জন্য লিফলেট বিতরণ করেছি। তাদের বলা হয়েছে অবৈধ জাল দ্বারা পোনামাছ নিধন না করতে। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। জেলা মৎস্য অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি জেনেছি। অবৈধ জাল দিয়ে পোনা মাছ শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত