ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ফেনীর ‘খন্ডলের মিষ্টি’ যাচ্ছে সুদূর আফ্রিকায়

ফেনীর ‘খন্ডলের মিষ্টি’ যাচ্ছে সুদূর আফ্রিকায়

গরুর দুধ থেকে ছানা, ছানা থেকে তৈরি হয় রসগোল্লা। ফেনীর বিখ্যাত এই মিষ্টান্ন সর্বমহলে ‘খন্ডলের মিষ্টি’ নামে পরিচিত। প্রচলিত রসগোল্লার মতোই এর স্বাদ ও সুনাম, জেলা ও দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে পৌঁছেছে। এটি মূলত রসগোল্লার একটি ভিন্ন সংস্করণ। যেকোনো অনুষ্ঠানের তালিকায় থাকে এ মিষ্টি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেনী শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে পরশুরাম উপজেলার ছোট্ট এক বাজারের নাম ‘খন্ডল হাই’। সত্তরের দশকে এই বাজারের নামেই নামকরণ হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী ওই মিষ্টির। সুস্বাদু এ মিষ্টি প্রথম তৈরি করেছিলেন যোগল চন্দ্র দাস। মোট ৫২ ধরনের মিষ্টি বানাতে পারতেন যোগল। তার মিষ্টি বানানোর পারদর্শিতার কথা জানতে পেরে তার কিছু সাগরেদও জুটে যায়। এরই মধ্যে যোগল দাসের দোকানের স্পঞ্জের মিষ্টির খ্যাতি আশপাশের এলাকা ছড়িয়ে পড়ে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে যোগল চন্দ্র দাস ব্যবসা ছেড়ে চলে গেলেও তার সাগরেদরাই ধরে রাখেন মিষ্টির ঐতিহ্য। আশপাশের গ্রাম থেকে কলসি, প্লাস্টিকের ড্রাম, বোতল ও হাঁড়িতে করে দুধ আসে কারখানায়। প্রথমে সুতি কাপড়ে কাঁচা দুধ ছেঁকে নেওয়া হয়, এরপর চুলায় চাপানো হয় ১৭ কেজি দুধ। আধঘণ্টা জ্বাল দেওয়ার পর চুলা থেকে নামানো হয় সেই দুধ। তারপর উষ্ণ দুধে টক পানি ও কিছুটা বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি মিশিয়ে দুধের ছানা তৈরি করা হয়। সুতি কাপড়ের মাধ্যমে ছানা আলাদা করা হয়। ১৭ কেজি দুধ থেকে পাওয়া যায় দুই কেজি ছানা। শুকানো ছানা থেকে শুরু হয় মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া। প্রথমে হাত দিয়ে পুরো ছানা দলা করে মেশানো হয় ২০ গ্রামের মতো ময়দা। প্রথমে ৬ লিটার পানি হালকা জ্বাল করে তাতে পাঁচ কেজি চিনি মেশানো হয়। উচ্চ আঁচে ১৫ মিনিটের মতো জ্বাল দেওয়া হয়। পরে ছেঁকে নেওয়া হয়। খন্ডলের পাটোয়ারি মিষ্টি মেলার স্বত্বাধিকারী মো. বেলাল হোসেন বলেন, খন্ডলের মিষ্টির অন্যতম বিশেষত্ব হল প্রায় সব মিষ্টি ঠান্ডা অর্থাৎ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় খাওয়া হলেও খন্ডলের মিষ্টি খাওয়া হয় গরম এবং ঠান্ডা উভয় অবস্থাতেই। মিষ্টি কিনতে আসা আবু ইউসুফ মিন্টু বলেন, দেশে দেশে ছড়িয়ে থাকা ফেনীর প্রবাসীরা ও প্রবাসে থাকা স্বজন ও বন্ধুদের জন্য খন্ডলের মিষ্টি নিয়ে যান। প্রায় প্রতি সপ্তাহে কাতার, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে খন্ডলের মিষ্টি নিয়ে যান প্রবাসীরা। খন্ডলের মিষ্টির উদ্ভাবক যোগল চন্দ্র দাস বলেন, এ মিষ্টির প্রধান ও একমাত্র উপকরণ হলো গরুর খাঁটি দুধের ছানা। এখানে গোপন ফর্মুলা নেই। ভীষণ চাহিদা সত্ত্বেও প্রতিদিন ১৫০ কেজির বেশি মিষ্টি তৈরি করা হয় না। কারণ তাতে মিষ্টির গুণমান কমে যায় বলে ধারণা তার। পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে প্রতিষ্ঠানটির আরো সুনাম ছড়িয়ে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত