ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজশাহীবাসীর গর্বের সাত জিআই পণ্য

রাজশাহীবাসীর গর্বের সাত জিআই পণ্য

ভৌগোলিক নির্দেশক সাত (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতির পাশাপাশি রাজশাহীকে ব্র্যান্ডিং করেছে এগুলি। আম, দই ও কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতির পরে এই পণ্যগুলোর চাহিদা ও কদর বেড়েছে। জিআই পণ্যের তালিকায় থাকা রাজশাহী-চাঁপাইয়ের ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আশ্বিনা আম সারাবছর না মিললেও বছরজুড়ে মিলবে বগুড়ার দই আর নাটোরের কাঁচাগোল্লা। ফলে উত্তরের রাজশাহী বিভাগের যেকোনো জেলা ঘুরে ফেরার পথে সব ছুটে গেলেও অন্তত কাঁচাগোল্লা যে কেউ নিতে পারবেন পরিজনের জন্য। কারণ এই বিভাগের পাবনা-সিরাজগঞ্জ ছাড়া বাকি জেলাগুলোর প্রবেশদ্বার নাটোর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ১৭টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি রয়েছে। বিভাগ হিসেবে ধরতে গেলে রাজশাহী এগিয়ে। এ বিভাগের সাতটি পণ্য পেয়েছে জিআই স্বীকৃতি। রাজশাহী বিভাগের সাতটি পণ্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর আবেদনের ফলে জার্নালে প্রকাশের পরে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে মেলে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি। জিআই পণ্যের স্বীকৃতি তালিকায় রয়েছে রাজশাহী জেলার দুটি পণ্য। একটি রাজশাহী সিল্ক ও অপরটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম। বেশ কয়েটি জাতের আম নিয়ে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জিআই পণ্যের তালিকায় উপরে রয়েছে। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মিলে যৌথ স্বীকৃতি রয়েছে ফজলি আম নিয়ে। আর বগুড়ার দই ছাড়াও জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে নাটোরের কাঁচাগোল্লার।

খিরসাপাত আম : রাজশাহী অঞ্চলের জিআই পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম। খিরসাপাত জাতের আমটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য ২০১৭ সালের দুই ফেব্রুয়ারি আবেদন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এরপরে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় এটি। রসাল আমটির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশহীন। এই আমের ফুল আসা থেকে ফল পরিপক্ব হতে দরকার হয় চার মাস।

রাজশাহী সিল্ক : ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহী সিল্ককে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড, রাজশাহী। ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় রাজশাহী সিল্ক।

ফজলি আম : একই বছরের ৯ মার্চ ‘ফজলি আম’ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র। তবে ফজলি আম নিয়ে নিয়ে আপত্তি তোলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। ফলে ফজলি আম রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ২০২২ সালের ২৯ মে।

বগুড়ার দই : ২০১৮ সালে পহেলা জানুয়ারি বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বগুড়া জেলা শাখা ‘বগুড়ার দই’ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির আবেদন করে। ২০২৩ সালের ৫ জুলাই বগুড়ার দই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

ল্যাংড়া আম : সুস্বাদু ফল আম। আমের ৩০০-এর অধিক প্রজাতি রয়েছে। কিছু কিছু আম আবার স্বাদে-গন্ধে-গুণে অতুলনীয়। বাহারি সব রঙ, আকার, আর স্বাদে ভরপুর আম, ফলের রাজা হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই তো ল্যাংড়া আমকে ফলের রাজা বলা হয়।

আশ্বিনা আম : ২০১৮ সালে পহেলা জানুয়ারি আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির আবেদন করে। ২০২৩ সালের ২৫ জুন আশ্বিনা আম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়। অন্য সব আম গাছের সাথে মুকুল আসে আশ্বিনার। তবে এ জাতের আম গাছে থাকে সাধারণত আগস্ট মাস পর্যন্ত।

কাঁচাগোল্লা : সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ আগস্ট জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় নাটোরের কাঁচাগোল্লা। এর আগে ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ নাটোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জিআই পণ্য হিসেবে নাটোরের কাঁচাগোল্লার স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, একক জেলা হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সর্বোচ্চ চারটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি আমাদের জন্য একদিকে যেমন গর্বের, তেমনি অন্যদিকে তা বিরাট সম্ভাবনার। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, এক্সপোর্ট আইটেম যত বেশি হবে অর্থনীতি ততো শক্তিশালী হবে। দেশ, অঞ্চল বা শহর জলবায়ু, সংস্কৃতির সঙ্গে অনন্য বৈশিষ্ট্য হলে তাদের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতির পায়। এর মান বজায় রাখে এক্সপোর্টের ভলিয়মটা বাড়ে। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা অঞ্চল থেকে জিআই পণ্য তৈরি করে এক্সপোর্টটা বাড়াতে পারি, তাহলে আমাদের রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত