ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হারিয়ে যাচ্ছে মাটির হাঁড়িপাতিল

হারিয়ে যাচ্ছে মাটির হাঁড়িপাতিল

সারাদেশের মতো নীলফামারীতেও হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিলের ব্যবসা। বাপ-দাদারা হাটে গিয়ে খুঁটি, হাঁড়ি, পাতিল, কলস, স্লিম, পুতুল, ব্যাংক, প্লেট, রুটি তৈরির তাওয়া, চারি, কান্টা, ফুলের টপ, থালা, মাটির খেলনা বানা শহরের বাজারে দেখা গেলেও গ্রামে আর এসব পাওয়া যায় না। স্বামীর সংসারে ২১ বছর থাকি এই কাজ করি, স্বামী, বেটা বেটি তিনটা ওলাও এই কামই করে, তাও সংসার চলে না, কথাগুলো বললেন, নীলফামারী সদরের সোনারায় ইউনিয়নের জয়চন্ডি গ্রামের কুমার পাড়ার নমিতা পাল (৩৯)। স্বামী খগেন্দ্র পাল (৪৫) বলেন, ‘প্লাস্টিকের ভাড়া পাতিল বের হওয়ার কারণে, হামার মাটির জিনিষপত্র এখন কাহোয় নেয় না। বছরে একবার পহেলা বৈশাখ, হিন্দুর বিয়া বাড়ী ও বিভিন্ন পূজাপার্বনে একটু বেচাকেনা হয়, এখন তাও হয় না। এক সময় এই ব্যবসার যতেষ্ট কদর ছিল। বাড়িতে এসে পাইকাররা বায়না দিয়ে যেত এখন আর সেই দিন নেই। কামাই খুব হইত। কিন্তু এখন পেটে চলে না। সোনারায় ইউনিয়নের মুসরত কুকাপাড়ায় রয়েছে এই শিল্পের প্রায় ৬৫ পরিবার। এ ছাড়াও জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে ২৩০ পরিবার এই পেশায় জীবনযাপন করে। কিন্তু মাটির অভাব, প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে চরম অস্তিত্ব সংকটে নীলফামারীর মৃৎশিল্পীরা। উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর ন্যায্য মূল্য না থাকায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অন্য পেশায় যেতে বাদ্য হচ্ছে। সাত পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে কোনো রকমে ধরে রেগেছেন তারা। বাজারে প্রচলিত প্লাস্টিক সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে তারা এখন কোণঠাসা। ফলে গ্রাম বাংলার এই শিল্পের ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি তাদের দুর্দিন যাচ্ছে। একই গ্রামের মৃৎশিল্পী বিকাশ চন্দ্র পাল (৪০) বলেন, পুরুষদের প্রধান কাজ মাটি কিনে সেগুলো কাদা করা ও ভাটায় পোড়ানো। এরপর এসব সামগ্রী নিজ হাতে তৈরি করেন বাড়ির নারী ও ছেলেমেয়েরা। আর এসব তৈরি সামগ্রী বাজারে বিক্রি করি আমরা। কিন্তু দিন দিন চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন হাত পড়েছে কপালে। জেলা শহরের ওইসব সামগ্রী বিক্রি করতে এসে কৈলাস চন্দ্র পাল (৪৫) বলেন, মাটির তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কলস, সারোয়া, পেচি, তাওয়ার এক সময় খুব চাহিদা ছিল। বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা সামলাই যেত না। এখন হাটে আসা যাওয়া ভ্যান ভাড়াই উঠে না। আগে গরমে পানি রাখার একটি কলস বিক্রি হতো ৩০-৪০ টাকা। এখন ফ্রিজ বের হয়ে কলসের কোনো চাহিদা নেই। হঠাৎ এক-আধটা বিক্রি হয়, তাও পানির দামে দিতে হয়। সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দীপক চক্রবর্তী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমি জেনেছি কুমারপাড়ার ওই পরিবারগুলো বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করায় তাদের কোনো সমবায় সমিতি নেই। তাদের এক জায়গায় করে সমবায় সমিতির মাধ্যমে সহযোগিতা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, প্লাস্টিকের উৎপাদিত পণ্যের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে কুমার শিল্প।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত