দিনাজপুরে আলুর বাজার লাগামহীন

হিমাগারে মজুত সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কামরুল হুদা হেলাল, দিনাজপুর

সরকারের বেঁধে দেওয়া আলুর দামের কোনো তোয়াক্কাই করছে না ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দিনাজপুরে আলুর দাম এখন অসহনীয় পর্যায়। সাধারণ ক্রেতাদের আলু কিনতে গিয়ে কেজি প্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। সরকারি হিসাব মতে, জেলার ১৩টি হিমাগারে প্রায় ১৮ হাজার মেট্রিক টন খাওয়ার আলু ও বীজের জন্য ৫২ হাজার মেট্রিক টন আলুর মজুত রয়েছে। এর পাশাপাশি কৃষকদের কাছেও সারা জেলায় ৭ হাজার মেট্রিক টনের মতো আলু মজুত রয়েছে। দিনাজপুরে আলুর বাজার দিন দিন অস্থির হচ্ছে। যেখানে ৭ দিন আগে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছিল ৩০ টাকায়। তা এখন ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে কেনাবেচা হচ্ছে।

গত ২ দিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম ও পেঁয়াজের সঙ্গে আলুর খুচরা মূল্য কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করলেও কোনো বাজারেই তার প্রতিফলন নেই। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল ৪৪ হাজার ৯৬৪ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে। সম্ভাব্য উৎপাদনের পরিমাণ ১১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু। বাড়তি জমির কারণে সোয়া লাখ মেট্রিক টন আলু লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি উৎপাদন হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, ১২ হাজার ৫২৫ হেক্টরে এক্টারিক জাতের আলু, ৭ হাজার ৯৫৫ হেক্টরে ডায়মন্ড, ৫ হাজার ৩৫৫ হেক্টরে গেনুলা, ৫ হাজার ২৮৩ হেক্টরে কার্ডিনাল, ৪ হাজার ৫৯০ হেক্টরে কারেজ জাতের আলু আবাদ করা হয়। ৯ হাজার ৭৯২ হেক্টরে অন্যান্য জাতের আলু আবাদ করেন কৃষকরা। দিনাজপুরে চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলু উৎপাদন বেড়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান। দিনাজপুরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩টি হিমাগারে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন খাওয়ার ও বীজের আলু মজুত করা হয়।

এর মধ্যে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন খাওয়ার আলু ও সাড়ে ৫১ হাজার মেট্রিক টন বীজ আলু ছিল। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩টি হিমাগার থেকে খালাস হয়ে বাজারে এসেছে সাড়ে ৪৭ হাজার মেট্রিক টন খাওয়ার আলু। এখন পর্যন্ত কোনো বীজের আলু হিমাগার থেকে খালাস হয়ে বাজারে আসেনি বলে জানায় সূত্রটি। বর্তমানে হিমাগারে মজুত রয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন খাওয়ার আলু ও সাড়ে ৫১ হাজার মেট্রিক টন বীজের আলু। আলু ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, আলুর দাম দিন দিন বাড়ছে। ডায়মন্ড আলুর ক্রেতা বেশি। বর্তমানে তা পাইকারি দরে কেজি প্রতি ৩৬ টাকা, চল্লিশা জাতের আলু ৪০ থেকে ৪২ টাকা, রোমানা জাতের আলু ৩২-৩৩ টাকা আল স্টিক ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আলুর দাম খুব একটা কমবে না। ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, কার্ডিনাল জাতের আলুর ক্রেতা কম। আর গ্যানুলা বীজের জন্য কেনাবেচা করা হয়। তিনি বলেন, হিমাগারে ৫০ কেজি ওজনের বস্তার জন্য ভাড়া দিতে হয় ৩০০ টাকা। মার্চ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করা হয়। ভাড়ার পাশাপাশি লেবার খরচ ও লোডিং আনলোডিং খরচ তো আছেই। বহুল চাহিদার সবজি ফসল আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সাধারণ ক্রেতাদের দুর্ভোগ যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে বাড়তি খরচ। তাই বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আলুর দর সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সাধারণ ক্রেতারা অহরহ আবেদন নিবেদন করছেন।