ঘোড়াঘাটে রোগীর শরীরে ভুল গ্রুপের রক্ত প্রয়োগ

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদ, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর)

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সের দায়িত্বের অবহেলায় রোগীর শরীরে অন্য গ্রুপের রক্ত প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগী রোগীর স্বামী বাদী হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল আনোয়ার বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ভুক্তভোগী রোগীর স্বামী উপজেলার আবিরের পাড়া গ্রামের বাসিন্দা রাসেল আহম্মেদ এ অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাসেল আহম্মেদ স্ত্রী শহর বানুকে (২৪) শরীর দুর্বল ও রক্ত শূন্যতার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে রোগীর শরীরে রক্ত প্রদান করার পরামর্শ দেয়া হয় এবং রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়। এতে রক্তের গ্রুপ এবি পজেটিভ প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে একজন পরিচিত রক্তদাতার খোঁজ পান। পরে মঙ্গলবার হাসপাতাল সংলগ্ন ওয়েলকাম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে এবি পজেটিভ গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করে কর্তব্যরত নার্সকে হাসপাতালে রক্ত সংরক্ষণ করতে বলা হলে তিনি উক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত রাখার পরামর্শ দেন। পরের দিন গত বুধবার রক্ত আনতে বললে বাদী অনেকটা অসুস্থ ও তার কোনো অক্ষর জ্ঞান না থাকায় রক্তের ব্যাগ এনে দিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স রক্তের গ্রুপ নির্ণয় না করে ও ক্রসম্যাচিং না করে এবি পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে বি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত রোগীর শরীরে প্রয়োগ করেন। এমতাবস্থায়, অর্ধেক রক্ত রোগীর শরীরে প্রবেশ করার পর বাদীর ছোট ভাই সোহেল রানা বিষয়টি লক্ষ্য করে নার্সকে জানালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা তড়িঘড়ি করে ভুল গ্রুপের রক্তের ব্যাগটি লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু এর আগেই রোগীর ভাই বিষয়টি মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী রোগীর স্বামী রাসেল আহম্মেদ জানান, ভুল রক্ত প্রয়োগ করার কিছুক্ষণ পর রোগীর শরীরে চুলকানোসহ কোমরের ব্যথা শুরু হয়। আমি একজন অতি দরিদ্র ব্যক্তি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসা করা আমার পক্ষে অনেকটা অসম্ভব। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ রোগীর উন্নত চিকিৎসার দাবি করছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নূর-ই আজমীর ঝিলিক অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমরা রোগীকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি। রোগী বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। এ ব্যাপারে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল আনোয়ারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যার হাসপাতাল। এখানে রক্ত সঞ্চালনের অনুমতি থাকলেও ক্রসম্যাচিংয়ের অনুমতি নেই। তাই অনুমোদন করা প্রতিষ্ঠান হতে ক্রসম্যাচিং করা বাধ্যতামূলক। ক্রসম্যাচিং করার ৮ ঘণ্টার মধ্যেই রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হবে। নতুবা পুনরায় ক্রসম্যাচিং করতে হবে। এ ঘটনায় রক্ত কোথায় ক্রসম্যাচিং করা হয়েছে। কারা এর সঙ্গে জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।