কাশফুলে ছেয়ে গেছে কালীগঞ্জের পারাবর্তা গ্রাম

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. আশরাফুল হক, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পারাবর্তা গ্রাম। গ্রামটি এখন ঢাকার পূর্বাচল শহরের ২৫নং সেক্টরভুক্ত। এ গ্রামের চারদিকে এখন কাশবন আর কাশফুলের মহাসমারোহ। এ যেন শ্বেত শুভ্র কাশফুলের এক মহাসমুদ্র। মাথায় ঢেউ তুলে প্রতিনিয়ত স্বাগত জানাচ্ছে আগত প্রকৃতি প্রেমীদের। এ অঞ্চলে কাশফুলের সৌন্দর্য প্রকৃতি প্রেমিদের মনের খোরাক মেটানোর পাশাপাশি কাশবন হতদরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শরতের বিকালে স্নিগ্ধ বাতাসে নীল আকাশে খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘ। ধুধু বালুচরে কাশফুলের বিছানা। এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি।

ঢাকার পূর্বাচলভুক্ত পারাবর্তা ছাড়াও কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর অববাহিকায় দেখা মেলে এমন মনোহর দৃশ্যের। আবহমান বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্য আর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য হয়ে প্রতি বছর শরৎ ঋতুতে গ্রামগঞ্জের জনপদের আনাচে কানাচে ফুটে থাকে কাশফুল। দূর থেকে ফুলটিকে দেখলেই বুঝা যায় এখন শরৎকাল। মৃদু বাতাসের পরশে কাশের দল বারবার যেন মাথা নেড়ে চলেছে। ক্ষণিকের জন্য শহরের কোলাহল ছেড়ে নদী, বালুচর, সাদা মেঘ ও কাশফুলের এই মিতালি দেখে অভিভূত হতে প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। অনেকেই পরিবারসহ কাশবনে বেড়াতে এসে ঘুরে বেড়ান শেষ বিকেলের আলোয়। শুভ্র কাশফুলের মাঝে মুক্ত প্রকৃতি সহজেই মনকে সিক্ত করে তুলেন। কাশফুল মূলত বহুবর্ষজীবী ছন গোত্রীয় এক প্রকার ঘাস। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো রুক্ষ এলাকা, চারণভুমি কিংবা গ্রামের উঁচু জায়গায় কাশবন বেড়ে ওঠে বিনা যত্নে। পলিমাটির আস্তরযুক্ত জমিতে কাশের মূল সহজে সম্প্রসারিত হতে পারে বলে নদী তীরে কাশবন বেশি জন্মায়। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। শরত ঋতুতে পালকের মতো নরম, সাদা ধবধবে কাশফুল ফোঁটে। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ খুবই ধারালো হয়। কাশ শরৎ ঋতুর ফুল। কাশফুল মূলত দুই ধরনের। পাহাড়ি কাশ এবং চরাঞ্চলের কাশ। এর কোনো সুগন্ধ নেই। প্রায় মাসব্যাপী ফুটে থাকে ফুলটি। কাশফুলের মঞ্জুরি (ডাটা) লম্বা হয়ে থাকে। মঞ্জুরির মাথায় অনেকগুলো শাখা থাকে। শাখা পূর্ণ হলেই ফুল ফোটে। ফুলটি দেখতে ছোট কিন্তু মঞ্জুরিবদ্ধ হওয়ায় দূর থেকে সহজেই দেখা যায়। গ্রাম এলাকায় গরুর খাবার, ঘর ও পানের বরজের ছাউনি, জ্বালানি ও ঝাড়ু হিসেবে কাশের ব্যবহার হয়ে আসছে সুদীর্ঘকাল থেকে। এছাড়া পিত্তথলির পাথর, শরীরে ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় ও শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে কাশের মূল ঔষুধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কাশবনে ঘুরতে আসা প্রকৃতিপ্রেমী ইকবাল হোসেন ভুইয়া জানান, কাশবনে ঘুরতে এলে এক ভিন্নরকম অনুভূতির জন্ম নেয়। মনে হয় যেন, মেঘের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে কাশবন কমে যাচ্ছে। এছাড়া নদীর তীর দখল হয়ে যাওয়ার কারণেও দিন দিন কাশবনের পরিধি কমে যাচ্ছে। সৌন্দর্য প্রেমিদের মানসিক চাহিদা পূরণের জন্য হলেও আগের মতো দিগন্ত বিস্তৃত কাশবন টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।