অন্ধ রফিকুলের একমাত্র ভরসা বাঁশি

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ছোট্ট বয়সে টাইফয়েড জ্বরে হারিয়েছেন দুটি চোখ। একদিকে দরিদ্রতা অন্যদিকে অন্ধ হলেও তিনি ভিক্ষাবৃত্তি না করে লজেন্স বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাঁশিতে সুর তুলে সবাইকে বিমোহিত করে তিনি বিক্রি করেন লজেন্স। ৭১ বছর বয়সি রফিকুল ইসলাম মুন্সী শরীয়তপুর সদর উপজেলার ভুচূড়া গ্রামের মৃত হোসেন মুন্সীর ছেলে। অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় ১০ বছর বয়স থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলামের জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। এক সময় ঢাকার বিভিন্ন গণপরিবহনে লজেন্স বিক্রি করলেও এখন বয়সের ভারে নিজ গ্রামের পার্শ্ববর্তী কানার বাজার ও পালং বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বাঁশি ও লজেন্স বিক্রি করতে দেখা যায় তাকে। এ লজেন্স বিক্রির সামান্য আয় দিয়েই চলে তার সংসার। রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫২ সালের দিকে অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম রফিকুলের। বয়স যখন ৪ বছর তখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। গরিব বাবার পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব না হওয়ায় হারাতে হয়েছে দুই চোখ। তবে হেরে যাননি তিনি। ১০ বছর বয়স থেকে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। ভিক্ষাবৃত্তিকে ভীষণভাবে অপছন্দ করায় শুরু করেন কাজের সন্ধান। এরপর তিনি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাসে আর ট্রেনে ঘুরে ঘুরে লজেন্স বিক্রি করতে থাকেন। ১৯৭৩ সালে লজেন্স বিক্রির কোনো এক সময় পরিচয় হয় এক বাঁশিওলার সঙ্গে। তার কাছ থেকেই রপ্ত করেন বাঁশি বাজানো। এরপর বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। যা এখন পর্যন্ত ধরে আছেন। তার সংসার জীবনে স্ত্রী রোকেয়া বেগম, দুই ছেলে আব্দুর রহিম, সোহাগ মুন্সী রয়েছেন। যদিও ছেলেরা বিয়ের পর তাদের সংসার নিয়ে আলাদা থাকছেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, ৪ বছর বয়স থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আমি। সেই থেকেই আমার দুঃখের জীবন। শুনেছি ভিক্ষা করা আল্লাহ পছন্দ করে না। তাই নিজে নিজেই কাজের সন্ধান করে লজেন্স বিক্রি করা শুরু করি। আমি এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই সংগ্রাম করে যাব। বোরহান উদ্দীন মুন্সী বলেন, তিনি খুব ছোটবেলা থেকে বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করেন। তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও ভিক্ষা করেন না। এভাবেই তার সংসার চলছে। শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, রফিকুল ইসলামের কথা আমি অনেক শুনেছি। তিনি দারুণ বাঁশি বাজান। একটা বিষয় হচ্ছে উনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে না নিয়ে বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এটা সত্যিই অবাক করার মতো। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।