ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি

বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি

কালের বিবর্তনে ঝিনাইগাতী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি শিল্প এক সময় ভোর হতেই শোনা যেত- ‘ও ধান বানেরে ঢেঁকিতে পার দিয়া, ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া ও ধান বানেরে ঢেঁকিতে পার দিয়া’ এই গান আর ঢেঁকির ধাপুর-ধুপুর শব্দ। সুখ-দুঃখের গল্পের সঙ্গে অন্তরের কথা সুতায় গেঁথে গান বলত আর ঢেঁকিতে পাড় দিতো গ্রাম-বাংলার নারীরা। যান্ত্রিকতার ভিড়ে সেই চিরচেনা সুরের সঙ্গে মন চঞ্চল করা সেই গান আজ শুনতে পাওয়া ভার। মাটির ঘরের এক সাইডে দুই পাশে দুইটা কাঠ পুঁতে কাঠ দুইটার মাথার উপর আর একটা বাঁশ রাখা হয়, তার উপর হাত রাখার জন্য। ঘরের মাটির ভিটা সই করে ঢেঁকির জায়গা ঠিক করা হয়। শাল গজারি গাছের কাঠ দিয়ে সোজা তৈরি করে পেছনের অংশ চ্যাপ্টা সামনের অংশ তিনকোণা করে তার নিচে সুরের মতো করে তৈরি। যাকে বলা হয় আংতা বা মুষল। মুষল পড়ে গড়ের উপর। মাটিতে গর্ত করে গড় তৈরি করা হয়। গড়ের মধ্যে ধান, চাল বা শস্য দিয়ে ভিটার উপর দাঁড়িয়ে এক পা দিয়ে ঢেঁকি উঁচু করে ঢেঁকিতে পাড় দেওয়া হয়। ঢেঁকি রাখার জায়গা সাধারণ তো পাকের ঘরই ছিল গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যর ঢেঁকিশালা। শোবার ঘর আধ-ভাঙা হলেও ঢেঁকিশালা খুব পরিপাটি করে তৈরি করত গ্রাম-বাংলার নারীরা।

দুইজন নারী ঢেঁকিতে পাড় দিত, একজন এলে দিত। এলে দেওয়া বলতে যখন ঢেঁকির আংতা গড়ের মধ্যে পরে তখন চালের গুড়াতে চাপ লেগে চাল ভাঙতে শুরু করে। তারপর ঢেঁকি উঁচু করে করে মাঝেমধ্যে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়। এই নাড়াচাড়া করাকে এলে দেওয়া বুঝায়। আর একজন সেই চালের গুড়া ছাকনি নিয়ে ছাকে। চারজন নারী ঢেঁকিতে কাজ করে। চাল গুড়া হয়ে যাবার পর সেই চালের গুড়া দিয়ে পিঠা,পায়েস, ফিরনিসহ শীতের হরেক রকমের মজার পিঠা তৈরি করত। পিঠা আর পায়েসের সেই মনভোলানো সুঘ্রাণ পড়শি বাড়ি চলে যেতো।

বিকাল হলে ঢেঁকিশালায় বধূদের মেলা বসত। একে অন্যকে ঢেঁকিপাড় দিয়ে সহযোগিতা করত। এতে করে পাড়াপড়শিদের মধ্য সুসম্পর্কও ছিল। একজনের অভাব আর একজন দেখত। অন্যর ঢেঁকিতে ধান ভেনে চিড়াকুটে বা চালের গুড়া করে দিয়ে অভাব পূরণ করার পথ ছিল। শুধু অভাবপূরণ না ঢেঁকি ছাঁটা চালের গুড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বলে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঢেঁকি ছাঁটা চালকে বলে ব্রাউন রাইস। ব্রাউন রাইসে আছে স্টার্চ ও ফাইবার। যা ভিটামিন বি, ভিটামিন ই ম্যাঙ্গানিজ ও সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ। কিন্তু যুগের আধুনিকায়নে যন্ত্রের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি শিল্প। মেশিনেই ধান ভানাসহ চালের গুড়া করা হয়। গ্রামের অভাবগ্রস্ত নারীরা এখন ঢেঁকিতে কাজের চাহিদা না থাকায় অন্যর বাড়ি কাজ করে কেউবা অভাবের সঙ্গেই দিন কাটায়। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলেও কয়েক গ্রাম ঘুরে ঢেঁকি শিল্পের দেখা পাওয়া ভার।

অতীতে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ঢেঁকি শিল্পের কদর ছিল শুধু শহরের লোক ঢেঁকির নাম শুনলেও তা দেখতে পেতো গ্রামে এসে বা জাদুঘরে। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এখন গ্রামেও ঢেঁকির দেখা মেলে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত