ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রতিদিন কোটি টাকার কারবার হয় দাশের হাটের বাজারে

প্রতিদিন কোটি টাকার কারবার হয় দাশের হাটের বাজারে

পূর্ব আকাশে আলো ফোটার আগেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে ওঠে বরিশালে দক্ষিণের সবচেয়ে বড় মৎস্য পোনার বাজার। প্রতিদিন এ হাটে কোটি টাকার পোনা বেচাকেনা হয়। কোনো ছাউনি ঘরও না থাকায় রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন কয়েকশ’ খুচরা ও পাইকারি হকার মাছের পোনা বেচাকেনা করেন এখানে। সরেজমিন জেলার গৌরনদী-আগৈলাঝাড়া হাইওয়ের পাশে দাশের হাট স্ট্যান্ডে অবস্থিত বাজারটি ঘুরে জানা যায়, ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা এই বাজারে প্রতিদিন বরিশালসহ গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হকার ও পোনার মালিকরা ভোরের আলো ফোটার আগেই নছিমন, করিমন, ভ্যান ও মিনিট্রাকে মাছের পোনা নিয়ে হাজির হন। বিভিন্ন দামে, কেজি ও ইঞ্চি পদ্ধতিতে চলে পোনা বেচাকেনা। তবে ভোর থেকে সকাল ৯ থেকে ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় এ বাজারের কেনাবেচা।

জানা যায়, স্থানীয় মাছের পোনার বড় ব্যবসায়ীরা যশোর, ময়মনসিংহ ও অন্য জেলা শহর থেকে পোনার রেণু বা ডিম কিনে এনে তাদের পুকুরে লালন পালন করে, সেই পোনা আবার এই বাজারে এনে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ হকারের কাছে বা গৃহস্থীর কাছে বিক্রি করেন। কোনো কোনো স্থানীয় ব্যবসায়ী ডিম থেকে পোনা উৎপাদনের হ্যাঁচারি স্থাপন করে পোনা উৎপাদন করে এই বাজারে বিক্রি করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ হকাররা প্রয়োজন মতো বিভিন্ন মাছের পোনা এ বাজার থেকে কিনে আশপাশের গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করেন। স্থানীয় পোনা মাছ ব্যবসায়ী দিদারুল আলম বলেন, প্রায় সময়ই রোদ পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পোনা বেচাকেনা করতে হয়। এতে অনেক সময় টাকা-পয়সা নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়।

এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে একটি টিনশেড ছাউনি ঘর নির্মাণের জন্য বাজার কমিটিকে একাধিকবার জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। আরেক ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, বাজার কমিটি একটি টিনশেড ছাউনি নির্মাণ না করায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা রোদ বৃষ্টিতে ভিজি সমস্যা নেই, কিন্তু আমাদের ইঞ্জিনচালিত গাড়িগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এখানে বিভিন্ন রকমের কার্পজাতীয় মাছ ও জিওল মাছের পোনা যেমন রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলবার, কারফু, গ্রাসকার্প, চিতল, তেলাপিয়া, কৈ, পাবদা, মাগুর, শোল, ট্যাংরা, পাঙাশসহ প্রায় সব ধরনের মাছের পোনা কেনাবেচা হয়। ব্যবসায়ীরা নামমাত্র খাজনা পরিশোধ করে এখানে মাছের পোনা বিক্রি করতে পারেন। জানা যায়, বছরজুড়ে এ বাজারে মাছের পোনা বেচাকেনা হলেও সব থেকে বেশি বিক্রি হয় বর্ষা মৌসুমে। এখানে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার পোনা কেনাবেচা হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন এ বাজারকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়। কেউ কেউ মাছের পোনা বিক্রির সরঞ্জাম যেমন জাল, পাতিল, ছোট-বড় ড্রাম, টিন, গামলা, ঝাঁপি ভাড়া দিয়েও জীবিকা চালাচ্ছেন। কেউ মাছের খাবার ও ওষুধ বিক্রি করেন। কেউ আবার মাছের পোনা বহনকারী ব্যাটারি বা ইঞ্জিনচালিত গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দাসের হাট মৎস্য বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হোসেন বলেন, বাজারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রচুর মানুষ এখন মাছের পোনা উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িয়েছেন, যা একদিকে স্থানীয় মানুষের বেকারত্ব দূর করছে অপরদিকে দেশের আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে। তবে এ বাজারে ব্যবসায়ীদের পোনা বেচাকেনার সুবিধার্থে একটি টিনশেড ছাউনি ঘর নির্মাণ করা একান্ত জরুরি। মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, আমরা মৌখিকভাবে বিষয়টি শুনেছি, আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু জানায়নি। ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে লিখিত আবেদন দিলে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে টিনশেড ছাউনি নির্মাণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত