পাটকাঠিতে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

এবছর পাট চাষ করে লোকসানে পড়েছেন বিভিন্ন জেলার কৃষকরা। তবে পাটের দাম ভালো না পেলেও পাটকাঠি দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। বাজারে পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে। আর তাই তো মেহেরপুরের অলিগলি, পাকা সড়ক, মাঠঘাটে চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের দৃশ্য। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাটকাঠি আগের মতো অবহেলায় ফেলে না রেখে যত্ন করে শুকিয়ে মাচা তৈরি করে রাখছেন চাষিরা। আগে সস্তা জ্বালানির বাইরে পাটকাঠির তেমন ব্যবহার ছিল না।

কিন্তু এখন আর এটি মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না। বাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় দামও ভালো পাওয়া যায়। মেহেরপুর সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের পাট চাষি ফজলুল হক জানান, কয়েক বছর আগেও পাটখড়ির তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন বেশ চাহিদা। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ভালো দামে পাটকাঠি কিনছেন। ১০০ মোটা পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। শুধু পাট বিক্রি করেই নয়, এবার পাটখড়িও আমাদের এলাকায় কৃষকের আশা জাগিয়েছে। পিরোজপুর জেলা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী মোকলেছুর রহমান জানান, সাত বছর ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছেন। আগে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটকাঠি কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন। এখন জেলায় প্রায় এক ডজন কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের পাটকাঠি দিয়ে এসব ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটানোই কষ্টসাধ্য। তাই মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে পাটকাঠি কিনে নিয়ে যাই। সাতক্ষীরা জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ী শামসুর রহমান জানান, আগের মতো আর কম দামে পাটকাঠি কিনতে পারেন না। কারণ বর্তমানে পাটকাঠির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি।

মেহেরপুর গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের পাটচাষি মজনুর রহমান জানান, পাটকাঠি একসময় শুধু রান্না-বান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া ও ছাউনির কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন এই পাটকাঠি পানের বরজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বাইরের জেলা থেকেও ফড়িয়ারা পাটকাঠি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের পাটচাষি সাইদুর রহমান জানান, বছর পাট চাষ করে খরচ উঠছে না। জাগ দেওয়ার জন্য পুকুর খরচ, দিনমজুরের খরচ দিতে গিয়ে চাষির কিছু নেই। এখন পাটকাঠি বিক্রিই একমাত্র ভরসা। তবে, পাটকাঠির এবার দাম বেশি। কারণ বিভিন্ন এলাকা থেকে ফড়িয়া ও মহাজনরা এসে পাটকাঠি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার জানান, জেলায় এবার মোট ২১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের রং না আসায় এবং বড় কিছু মিল বন্ধ থাকার কারণে পাটের বাজারে দাম কম। এতে কৃষকরাও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে এই পাটকাঠি।