ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুন্সীগঞ্জের টিন-কাঠের ঘরের কদর দেশজুড়ে

মুন্সীগঞ্জের টিন-কাঠের ঘরের কদর দেশজুড়ে

একসঙ্গে কয়েকটি ঘর। সবই ঝকঝকে নতুন। রেডিমেড এসব ঘরে রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। একতলা, দোতলা আর তিনতলা ঘর। ঘরের দরজা, জানালা, বেড়া, টুয়া, চাল, ভেতরে-বাইরে সব কিছুতেই নকশা করা কারুকাজ। দৃষ্টিনন্দন এসব ঘর তৈরি হয়েছে কাঠ, টিন, প্লেন শিট দিয়ে। এসব ঘরকে স্থানীয়ভাবে টিন-কাঠের বাড়ি বলা হয় মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্য এটি। শৌখিন কিংবা নিম্নবিত্ত এ অঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ি টিন-কাঠ দিয়েই তৈরি। নদীভাঙন-কবলিত অঞ্চল বলে এখানে কাঠের ঘরের কদর বেশি।

ভাঙনের শিকার হলে সহজেই সরিয়ে নেওয়া যায়। তাছাড়া বিপদ-আপদে ঘর বিক্রি করে নগদ অর্থও পাওয়া যায়। তাছাড়া নান্দনিক সৌন্দর্যের কারণে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এ রকম অনেক ঘরের দেখা মেলে। এখানকার মানুষ যে কতটা শৌখিনতা টিন-কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন এসব ঘর দেখলেই বোঝা যায়। কয়েক বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন নতুন দোচালা, তিনচালা, চৌচালা ও সাতচালা ঘর। এর মধ্যে শুধু লৌহজং উপজেলাতেই প্রতি মাসে ১০০-১৫০টি নতুন ঘর তৈরি হয়ে থাকে। নকশা, কাঠের ধরন ও আকারভেদে ঘরের দাম ২ লাখ থেকে ৩৫ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঘরগুলো তৈরি করার জন্য মিস্ত্রিরা আসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। অনেক মিস্ত্রি ঘর তৈরিতে সুবিধার জন্য ৪-৫ বছর ধরে মুন্সীগঞ্জেই বসবাস করছেন। প্রকারভেদে ঘরগুলো তৈরিতে তাদের মজুরি হয় ৩৫-৬০ হাজার টাকা। মুন্সীগঞ্জ সদরের হাতিমারা, বজ্রযোগিনী; লৌহজংয়ের কলাবাগান কাঠপট্টি; টঙ্গীবাড়ির বেতকা; সিরাজদিখানের মালখানগর, কুচিয়ামোড়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অর্ধশত কাঠের ঘরের হাট।

এসব হাটে দেখা মিলবে বিভিন্ন আকারের বাড়ি। নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় বার্মার লোহাকাঠ, শালকাঠ ও টিন দিয়ে এই ঘর নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে নাইজেরিয়ান লোহাকাঠ দিয়ে অধিকাংশ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। লোহাকাঠ দিয়ে নির্মিত ঘরগুলো সাধারণত ৫৫ বছর থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।

তাছাড়া দেশীয় কাঠেও তৈরি হয়ে থাকে রেডিমেড এসব ঘর। একটি এক তলা ঘর নির্মাণ করতে ৫-৭ জন শ্রমিকের ৮-১০ দিন সময় লাগে। ঘরগুলো বিক্রি হয় ২ লাখ টাকা থেকে ৮ লাখ টাকায়। এর চেয়ে বেশি দামেও ঘর পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ৫০-৫৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে সেগুলো অর্ডার করার পর বানিয়ে দেওয়া হয়। তবে অনেকেই বাড়িতে কাঠমিস্ত্রি এনে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়েও ২-৩ তলা প্রাসাদের মতো টিন ও কাঠ দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন।

জেলার সবকটি উপজেলায় এ ধরনের ঘরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে গাছ কিনে আনেন মহাজনরা। এরপর সেগুলোকে স’মিলে কেটে প্রয়োজনীয় আকার দেওয়া হয়। সেগুলোতে নকশা করেন নকশা মিস্ত্রিরা। টিনগুলো বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে আনেন ব্যবসায়ীরা। ঘরগুলো জমির ওপর দাঁড় করাতে ব্যবহার করা হয় কাঠ, সিমেন্ট ও লোহার খুঁটি। একটি পূর্ণাঙ্গ ঘর প্রস্তুত করতে কয়েক দফা কাজ করেন শ্রমিকরা। এদিকে বাহারি এসব ঘর নির্মাণে বরিশালের শ্রমিকদের আলাদা চাহিদা রয়েছে মুন্সীগঞ্জে। এ জেলায় বরিশালের প্রায় এক হাজারের বেশি শ্রমিক ঘর নির্মাণ কাজে জড়িত বলে কাঠমিস্ত্রিরা জানান।

রেডিমেড ঘরের নির্মাণ ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনে সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন।

তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলাজুড়ে রেডিমেড ঘর বিক্রির একটি প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে, বর্তমানে দেশজুড়ে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে, চাহিদাও বেড়েছে কয়েক গুণ বেশি। যেহেতু দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এখানে রেডিমেড কিনতে আসে, তাদের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীদের সার্বিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে, এ পেশার সঙ্গে নিয়োজিত ঘর নির্মাণ শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের আওতায় আনা হবে।

এছাড়াও যদি নতুন তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হয় তাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থার জন্য সহযোগিতা করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত