জুড়ীতে মাসোহারা দিয়ে চলছে অবৈধ অটোরিকশা!

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে বাজার গ্রামাঞ্চল থেকে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটোরিকশা। এর আগেও পুলিশকে মাসিক চাঁদা দিয়ে অটোরিকশাগুলো চলাচল করত। পরে বেশ কিছুদিন পুলিশকে চাঁদা দেওয়া বন্ধ থাকলেও জুড়ী থানার ওসি মোশাররফ হোসেন থানায় যোগদানের পর থেকে আবার মাসোহারা শুরু হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোর আলাদা আলাদা সমিতি রয়েছে। সমিতির নেতারা পুলিশকে হাত করে মাসিক নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দেন। এজন্য গাড়িগুলো নির্ধিদ্বায় সড়কে চলাচল করে। তবে অটোরিকশাগুলোর ইউনিয়ন কার্ড রয়েছে। যাতে তারা সড়কে চলাচল করতে পারে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধের হুমকি হয়ে উঠেছে এই বাহনটি। বাজারসহ আশপাশের মহাসড়কেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই অটোরিকশাগুলো। বেপরোয়া গতিতে এই বাহন চলার কারণে মুহূর্তেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ঘটছে অঙ্গহানি থেকে শুরু করে প্রাণহানিও। গত রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাছিরপুর এলাকায় পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ধামাই এলাকার রকিব আলী বালিম নামের এক মোটর সাইকেল আরোহী অটোরিকশার ধাক্কায় আহত হন। পরে সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বেশ কয়েকজন অটোরিকশা চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেক চালক সমিতিতে মাসে ১০০ টাকা করে দেন। এই টাকা থেকে কমিটির নেতারা থানায় একটি অংশ দেন। ভবানীগঞ্জ বাজারে এরকম তিনটি সমিতি রয়েছে যারা নিয়মিত চাঁদা দেয়। বাছিরপুর অটোরিকশা চালক সমিতির একজন বলেন, আমাদের সমিতিতে ১৬৫টি অটোরিকশা রয়েছে। আমরা সপ্তাহে সমিতিতে ২০ টাকা করে দিই। আর প্রতি মাসে থানায় দেয়ার জন্য ১০০ টাকা দেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটোরিকশা চালক বলেন, বর্তমান ওসি থানায় যোগদানের পর থেকে টাকা দিতে হয়। এর আগে তাকে টাকা দিতে হত না। এবং টাকা দেয়ার কোনো নিয়ম ছিল না। শফিক মিয়া নামের জুড়ীর এক অটোরিকশাচালক বলেন, আমি কখনো সমিতিতে টাকা দিইনি। গাড়ির মালিক প্রতি মাসে সমিতিতে টাকা দেন। ভবানীগঞ্জ বাজারের অটোরিকশাচালক ফজলু মিয়া বলেন, আমরা প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে দিই। ইউনিয়ন থেকে এক বছর মেয়াদি একটি কার্ড আনতে দিতে হয় ২০০ টাকা করে। ভবানীগঞ্জ বাজার রিকশা মালিক সমিতির সভাপতি কাদির মিয়া বলেন, আমরা আমাদের সমিতি’র সকল অটোরিকশা থেকে মাসে ১০০ টাকা নিই। এই টাকার অধিকাংশ পুলিশকে দিই। আমার সমিতিতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি অটোরিকশা রয়েছে। তিনি বলেন, জুড়ীতে এরকম ছয়টি সমিতি রয়েছে। সকল সমিতি মিলিয়ে বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ অটোরিকশা রয়েছে। তারাও প্রতি মাসে এভাবে থানায় টাকা দিয়ে থাকে।

এবং প্রতি বছর আমরা অটোরিকশা থেকে ইউনিয়নে কর দিই। স্থানীয় সমাজকর্মী আশরাফুজ্জামান রিশাদ বলেন, অনুমোদন না থাকার পরও সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এগুলো যত্রতত্র পার্কিংয়ের ফলে প্রতিনিয়ত বাজারে লেগে থাকে যানজট। এজন্য বেগ পোহাতে হয় পথচারীসহ অন্যান্য যানবাহনগুলোকে। এসব অটোরিকশা চালকদের নেই কোনো দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা। কখনো ডানে-বামে না তাকিয়ে নিচ্ছে ইউটার্ন ঘটছে দুর্ঘটনা, আবার কখনো বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হচ্ছে যাত্রীদের সাথে।

এ বিষয়ে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাকে কেউ মাসোহারা দেয় না। আমি কারো কাছ থেকে মাসোহারা নিই না। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান বলেন, যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে আমরা দেখব।