ঈশ্বরদীর খানমান পাতা যাচ্ছে অন্যান্য জেলায়

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলমাস আলী, ঈশ্বরদী (পাবনা)

গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা। ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের ৩নং প্ল্যাটফর্মে এসে থামে চিলাহাতি থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রকেট ট্রেন। যাত্রী উঠানামার সাথে সাথে দেখা যায় খানমানের বোঝা মাথায় নিয়ে কয়েকজন ট্রেনের জানালা দিয়ে খানমানের বোঝা ট্রেনের ভেতরে উঠাচ্ছে। তাদের নাম শেলি, শামিন, রাব্বি ও জগত পাগলা। তারা জানান, তাদের কারো বাড়ি গোপালগঞ্জ কারো চাটমোহর, কারো যশোর, কারো ঈশ্বরদীর ব্লাকপাড়া। তারা ঈশ্বরদী থেকে এই খানমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন। তবে যশোর, নোওয়াপাড়া, মোবারকগঞ্জে চাহিদা বেশি। প্রতি মুঠি খানমান ১০ থেকে ১২ টাকার বিক্রি হয়। এতেই তাদের ডাল ভাতের ব্যবস্থা হয়ে থাকে। জানা গেছে, প্রথম দেখতে অনেকটা কচু পাতার মত হলেও এটি আসলে খানমান হিসেবেই বেশি পরিচিত। সারা বছর খুব সামান্য পাওয়া গেলেও বৈশাখ থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত অনাবাদি বা বসতবাড়ির আশপাশে এবং রাস্তার আশপাশের পরিত্যাক্ত জমিতে এর দেখা মেলে প্রচুর। খানমান গাছের কাণ্ডসহ পাতা সিদ্ধ করে কালোজিরা, রসুন, সরিষা তৈল আর শুকনা মরিচ দিয়ে ভর্তা করে খেলেই বেশি সুস্বাদু লাগে। কেউ কেউ আবার এগুলোকে ঔষধি সবজি হিসেবেও খেয়ে থাকেন। অঞ্চলভেদে এই সবজির নাম ভিন্ন ভিন্ন। যেমন উত্তরাঞ্চলের লোকজন এটাকে বলে চামঘাস। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বলে ঘ্যাত্তর। কেউ কেউ আবার ঘেট কচু, ঘের কচু বলে, আদিবাসী চাকমা সম্প্রদায় এটাকে খারকন বা খারবাস বা খারাকেও বলে, গারো সম্প্রদায় কালামান বলে। খানমান শ্রমিক মো. শামিন আলী বলেন, দেশের উত্তর এবং দাক্ষিণাঞ্চলে এই খানমানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদা মেটাতে আমরা ছয়ম াস খানমান সংগ্রহ করার জন্য ঈশ্বরদীতে চলে আসি। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে একবেলা এগুলো সংগ্রহ করে রাতের ট্রেনে সেগুলো পাঠিয়ে দিই। সেখানে আঁটি ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা হারে নগদে পাইকাররা কিনে নেন। মাঝেমধ্যে পাইকাররা এখানে এসেও কিনে নিয়ে যান। রাব্বি জানান, বর্ষার সময় আমাদের অঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। আমাদের সব কাজ শেষ হয়ে যায় বলে আমরা প্রতি বছরই ঈশ্বরদীতে আসি খানমান তুলতে। বিভিন্ন অঞ্চলে এর ভালো চাহিদা থাকায় আমরা ভালো আয় করতে পারি খানমান বিক্রি করে। ঈশ্বরদী স্টেশন কুলি আতাবুল জানান, বেশ কয়েক বছর থেকেই এ সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় থেকে খানমান উঠিয়ে এনে স্টেশন এলাকায় ফাঁকা রেললাইনের পাশে বসে আগাছা পরিষ্কার করে মুঠি বাঁধে। মুটি বাঁধা খানমান বোঝা বেঁধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে।