বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তামা-কাঁসা শিল্প

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

স্বর্ণ নয়, কিন্তু তার মতোই চকচকে। একসময় স্বর্ণের পরেই ছিল অবস্থান। ছিল আভিজাত্যের মর্যাদা। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই কাঁসা-পিতলের ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী এখন আড়াল হয়ে গেছে। মাত্র দুই তিন দশক আগেও এসব প্রাচীন ধাতব পণ্যের যে সমাদর ছিল, তা যেন কালের অতলে হারিয়ে গেছে।

খুঁজে পেতে রীতিমতো অনুসন্ধান করতে হয়। যুগের পর যুগ এ পেশা আঁকড়ে ধরে টিকে থাকা কারিগরদের আক্ষেপ- চকচকে স্টিল, প্লাস্টিক আর মেলামাইনের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কাঁসা ও পিতলের শিল্প।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পদ্মার করাল গ্রাসে অনেকটাই নিঃস্ব আজ এই পেশার মানুষ। সাধ থাকলেও সাধ্য যেন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে তাদের। অর্থের অভাব ও চাহিদা কম থাকায় অস্তিত্ববিলীন হতে চলা এই শিল্পের কর্মচঞ্চলতা ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে সরকার, এমন দাবি প্রবীণ তামা-কাঁসা শিল্পের কারখানা মালিকদের। গতকাল সরেজমিন লৌহজংয়ের বিভিন্ন এলাকার ঘুরে দেখা যায়, এক সময়ের আভিজাত্যের প্রতীক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্তত অর্ধশতাধিক কারখানা থাকলেও, এখন টিকে আছে মাত্র ৩-৪টি। উপজেলার কনকসার এলাকায় দুটি আর নাগেরহাট এলাকায় অনেকটাই ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে একটি। স্থানীয়রা জানায়, মাত্র এক যুগ আগেও এখানে ঘুম ভাঙতো কাঁসা শিল্পের কারিগরদের টুং টাং শব্দে। লৌহজংয়ের দিঘলীর পালের বাজার ও নাগের হাটের অর্ধশতাধিক তামা-কাঁসাসহ পিতলের দোকান ও কারখানা এখন আর নেই, তবে যে কয়েকটি টিকে আছে, অর্থের অভাবে শেষ স্মৃতিটুকু বিলীন হতে বসেছে তাদেরও। কারখানার মালিকদের দাবি, এ শিল্প বাঁচাতে এবং তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে সরকারি ব্যাংকগুলো এগিয়ে এলে এবং স্বল্প সুদে সহজ উপায়ে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করলে এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। প্রায় ৩০ বছর ধরে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত নাগের হাটের শুভঙ্কর পাল বলেন, আমার পরিবার ব্রিটিশ আমল থেকে এ শিল্পের সঙ্গে প্রায় দেড়শ বছর ধরে জড়িত। আমি হচ্ছি পঞ্চম প্রজন্ম, এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার।

তবে যুগের পরিবর্তনে চাহিদা কমে যাওয়ায়, কদর কমেছে এই শিল্পের তৈরি তৈজসপত্রের। অর্থের অভাবে পুঁজি হারিয়ে পেশা বদল করেছেন অনেকেই, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে অস্তিত্ব বিলীন হবে এই শিল্পের। কারণ বিগত কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে পালের বাজার বিলীন হওয়ার পর থেকেই এ ব্যবসায় অনেকটা ধস নেমেছে। তবে, মেলামাইন আর ঝকঝকে স্টিলের ব্যবহারে, তামা-কাঁসা আর পিতলের ব্যবহার এখন অনেকটাই মুখ থুবরে পড়েছে বলে জানান কারখানা শ্রমিকরা। উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এক সময় বিশ্বজুড়েই কাঁসা-পিতলের ব্যাপক ব্যবহার ছিল। ভারত উপমহাদেশে ও সেই চর্চার বিস্তৃতি ঘটে স্বাভাবিক ভাবেই।

খুঁজলে নানান দেশে কাঁসা-পিতলের তৈরি জিনিসের ঐতিহাসিক ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যাবে, কাঁসা-পিতলের ব্যবহার যুদ্ধ সামগ্রী এবং বিভিন্ন শিল্পকর্ম। ভারত উপমহাদেশে ১৮ ও ১৯ শতকে ব্রিটিশ শাসনামলে কাঁসা-পিতলের সামগ্রী রীতিমত আভিজাত্যের প্রতীক ছিল।

ব্যয়বহুল এসব ধাতব সামগ্রী সাধারণের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। মূলত সমাজের বিত্তশালী ও প্রতাপশালী আর সনাতন ধর্মের মানুষরাই এসব পণ্য ব্যবহার করত বেশি।