সখীপুরে ৬ মাসে পিডিবির ২৫ ট্রান্সফরমার চুরি

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ইসমাইল হোসেন, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

টাঙ্গাইলের সখীপুরে ট্রান্সফরমার চুরি বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না পিডিবির ট্রান্সফরমার চুরি। কয়েকদিন পর পরই ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে উপজেলায় গেল ৬ মাসে ১০টি ইউনিয়নে অন্ততপক্ষে ২৫টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় চুরি আতঙ্ক বিরাজ করছে।

চুরি যাওয়া ওইসব এলাকায় নতুন ট্রান্সফরমারের জন্য ভর্তুকির টাকা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে অনেক বিদ্যুৎগ্রাহক। যেসব এলাকা থেকে ট্রান্সফরমার চুরি যাচ্ছে ওইসব এলাকায় শত শত গ্রাহক কয়েকদিন বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে থাকে। এসব এলাকা অন্ধকারে থাকায় একদিকে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে সন্ধ্যা হলেই চুরি ডাকাতির আতঙ্কে থাকছে এলাকাবাসী। কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়া বিদ্যুতের নতুন সংযোগ পাওয়ার প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।

সখীপুর পিডিবি (বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক মিটার ব্যবহারকারী রয়েছে বর্তমানে প্রায় লাখ খানেক। সখীপুর পিডিবির (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার বলেন, গেল কয়েক মাসে সখীপুরে পিডিবির ২০-২৫টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। চুরি ঠেকাতে আমরা উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। জনসচেতনতা বাড়াতে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়া এলাকাগুলো হচ্ছে, কচুয়া-কালিয়া সীমান্ত মোড়, দামিয়া হামের মোড়, আড়াইপাড়া বিল্লাল মেম্বারদের মোড়, গজারিয়া ভারতের চালা, মকরম চৌরাস্তা, কালিদাস, কালমেঘা, মুচারিয়া পাথার, বাঁশতৈল সীমান্ত, জোড়দিঘি সীমান্ত, বেড়বাড়ি বাজার উত্তরপাড়া, তক্তারচালা, হাতীবান্ধায় দুটি, তৈলধারা ফিডার এলাকা, হতেয়া-রাজাবাড়ি, কাকড়াজনে তিনটি, লাঙ্গুলিয়ায় দুটি, বহুরিয়া ফিডার এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা ও সখীপুরের সীমান্ত এলাকা রয়েছে।

কালিয়া ইউপির সাবেক মেম্বার বিল্লাল হোসেন বলেন, তাদের এলাকা আড়াইপাড়া ও দামিয়া গ্রামে এক সপ্তাহ ব্যবধানে দুটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপনে অনেক গ্রাহকই আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় ভর্তুকির টাকা জোগাতে পারছেন না। কাকড়াজান ইউনিয়নের ইমরান হাশমি নামের এক ছাত্রনেতা জানান, ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে গত তিন মাসের ব্যবধানে তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এদিকে, গত ১২ সেপ্টেম্বর সখীপুরের তৈলধারা ফিডার এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় মাইক্রোবাসসহ তিনজনকে আটক করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন ধাওয়া করে তাদের আটক করেন। পরে মামলা দিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করেন বিদ্যুৎবিভাগ। সখীপুর পিডিবির (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার বলেন, গত কয়েক মাসে সখীপুর থেকে ২০ থেকে ২৫টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এতে সাধারণ মানুষ ও বিদ্যুৎবিভাগের লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। প্রতিটি চুরির ঘটনায় থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর একটি মাইক্রোবাসসহ তিন চোরকে আটক করা হয়েছে।

ওই চোর চক্রের কাছ থেকে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু উপকরণ জব্দ করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক আইনে তাদের নামে মামলা করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে চোর চত্রের যোগাযোগ রয়েছে। ট্রান্সফরমারের মূল্যবান অংশটুকু অনেক দামে বিক্রি করেন চোরেরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সখীপুরে চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারগুলো ২৫০ কেভির। ট্রান্সফরমারের ভেতরের তামার অংশ থাকে একশ’ কেজির মতো। যার দাম এক লাখেরও বেশি। ভেতরের যে পানি থাকে সেটুকুরও অনেক দাম। মূল্যমান অংশটুকুই চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায়। পিডিবির একটি সূত্রে জানা গেছে, চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। এ প্রসঙ্গে পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার বলেন, তিনি গত ২০ মার্চ সখীপুরে যোগদান করেছেন। তার যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত ২০-২৫টির মতো ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। আরো বেশি হলে সেটি সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানিয়েছেন। সখীপুর থানার ওসি রেজাউল করিম বলেন, চুরি হওয়া ট্রান্সফরমারগুলো উদ্ধারসহ ওই চক্রটিকে ধরার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।