ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হোগলাপাতায় হাজারো মানুষের ভাগ্যবদল

হোগলাপাতায় হাজারো মানুষের ভাগ্যবদল

হোগলাপাতা, পাট ও বাঁশ দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পে ভাগ্য বদল হয়েছে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার হাজারো মানুষের। হোগলাপাতার কারুশিল্পে বদলে গেছে উপজেলার কর্মহীন মানুষের জীবন। গ্রামের হতদরিদ্ররা হোগলাপাতার দড়ি দিয়ে বাহারি হস্তশিল্প তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শুধু তাই নয়, এসব পণ্য ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের ২৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

বেলাব উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের জুহুরিয়া কান্দা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের হোগলাপাতার কারুশিল্প তৈরির কারখানা। উপজেলার একটি প্রত্যন্ত ইউনিয়ন বিন্নাইবাদ। এক সময় দরিদ্রতা ছিল এই ইউনিয়নের মানুষের জীবনসঙ্গী। পুরুষরা প্রতিদিন কাজ করলেও নারীরা ঘরের কাজ শেষে অবসর সময় কাটাতেন। কিন্তু বর্তমানে ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের সেই চিত্র বদলে গেছে। গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতে হোগলাপাতার হস্তশিল্প তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নারীরা। তাদের হাতে তৈরি পণ্য ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্তত ২৮টি দেশে যাচ্ছে। উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামের কারখানা মালিকরা নারী-পুরুষদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে ঘরে কর্মসংস্থানের ব?্যবস্থা করেছেন। হোগলাপাতা খুব সহজেই পচনশীল হওয়ায় এতে পরিবেশ দূষণের কোনো সম্ভাবনা নেই। বিশ্বজুড়ে আজ পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সি-গ্রাস বা সমুদ্রের তীরের ঘাস অর্থাৎ হোগলাপাতা, তালপাতা, খেজুরপাতা ও গোলপাতা জাতীয় জিনিসের তৈরি পণ্য।

পরিবেশবান্ধব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় হোগলাপাতার পণ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হোগলাপাতার রয়েছে নানা ধরনের নাম। বাংলায় হোগল, হোগলাপাতা ও ধারী পাতা নামে পরিচিত হলেও ইংরেজিতে এটাকে ক্যাট টেইল বা বিড়ালের লেজ বলা হয়। সাধারণত ৫ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার এই হোগলাপাতা রোদে শুকিয়ে বিশেষ কায়দায় এই পাতা পেঁচিয়ে প্রথমে দড়ি বানানো হয়। মাপ ও সাইজ ঠিক রাখার জন্য অধিকাংশ কারুপণ্য বানাতে লোহা ও জিআই তারের ডাইস ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি এ সকল কারুশিল্প পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বৈদেশিক বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। এখানকার তৈরি কারুপণ্য সাপ্লায়ারদের হাত হয়ে আমেরিকা, কানাডা, চীন, জাপান, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় ২৮টি দেশে রপ্তানি হয়। বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া স্বপ্না বলেন, সমাজের সকল বেকার যুবক, স্বামী পরিত্যক্ত নারী, অসহায় ও অসচ্ছল মানুষরা যেন এ কুটির শিল্পে কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, সেদিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত