গ্রামবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে দৃষ্টিনন্দন লোহার সেতু

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

পাবনার সাঁথিয়ায় গ্রামবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিজস্ব অর্থায়নে বাঁশের ভাঙা সেতু হয়ে গেল লোহা ও কাঠের মজবুত সেতু। এতে নদী পারাপারের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেল দুই গ্রামের বাসিন্দারা। অর্থ সংকটে দীর্ঘদিন বাঁশের সেতুটি ছিল জরাজীর্ণ। হাড়ি- চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন লোহা ও কাঠের মজবুত এই সেতুটি। ভাঙা সেতুতে পারাপারে প্রায়ই ঘটছিল ছোট বড় দুর্ঘটনা। জানা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী আত্রাইশুকা ও বিষ্ণুবাড়িয়া গ্রাম দুটির সীমানা দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী আত্রাই নদী। নদীটির উপর নির্মিত বাঁশের সেতু পার হয়ে হাট-বাজার, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসায় ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণে সুজানগর উপজেলার চরগোবিন্দপুর বাজারসহ সাঁথিয়া উপজেলা ও জেলা সদরে আসতে হয় আত্রাইশুকা ও বিষ্ণুবাড়িয়া গ্রামের লোকজনকে। দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর লোকজন জোড়াতালি দিয়ে বাঁশের সেতুটি ব্যবহার করে আসছে।

বছরের পর বছর সেটা মেরামত করে যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ছে তারা। আগস্ট মাসের প্রথমদিকে এটি পারাপারর অযোগ্য হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ী মুকুল হোসেন জানান, বাঁশের সেতুতে নিরাপত্তার অভাব। লোহা ও লোহার তৈরি মালামাল বাড়িতে আনতে পারি না। বাজারে অধিক খরচ করে ঘর ভাড়া করে মালামাল রাখতে হয়। সেখান থেকে প্রয়োজন মতো মালামাল মাথায় করে বাড়িতে আনতে হয়। সরকারি সহায়তা না পেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে এলাকাবাসী পরিবার প্রতি চাঁদা তুলে এটি মেরামতের সিদ্ধান্ত নেয়। আত্রাইশুকা গ্রামের আব্দুল সাত্তার খান জানান, পরিবার প্রতি চাঁদা তুলে এটি মাসব্যাপী মেরামত করি। মেরামত বাবদ প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গ্রামবাসীর কাছে থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান মুনসুর আলম পিনচু দিয়েছেন ২০ হাজার টাকা। এখনও প্রায় ২০ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। এ টাকা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি আমরা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভাতী কিন্ডারগার্টেনের আয়া স্বামী পরিত্যক্তা মনোয়ারা খাতুন জানান, আমি দারিদ্র্য মানুষ। আমার ঘর-বাড়ি কিছুই নেই। এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন কর্মস্থলে যেতে হয়। এটি মেরামতে আমিও চাঁদা দিয়েছি যাতে নিরাপদে পারাপার হওয়া যায়। আত্রইশুকা গ্রামের উঠতি বয়সি যুবক, নারী-পুরুষ স্বেচ্ছাশ্রমে এটি মেরামত শুরু করে। ২০ দিনের মাথায় এটি সুসম্পন্ন হয়। সিমেন্টের ও লোহার রড় দ্বারা তৈরি করা হয়েছে মোটা পিলার। তার উপর দুই পাশ দিয়ে লোহার পাত বসিয়ে করা হয়েছে ফ্রেম। লোহার তৈরি ফ্রেমের উপর বসানো হয়েছে শক্ত, মজবুত কাঠের তক্তা। দুইপাশে ধরার জন্য দেয়া হয়েছে লোহার পাইপ। এলাকার নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রীরা ও ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ নিরাপদে সেতুটি দিয়ে পারাপার হচ্ছে। ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুনসুর আলম পিনচু বলেন, সেতুটি আমি পরিদর্শন করেছি। আমি কিছু আর্থিক অনুদানও দিয়েছি। সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন জানান, এ ধরনের সেতু কিংবা সাঁকো নির্মাণ, মেরামতের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা দেয়া হয় না। আপনারা চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযাগ করেন।