মুন্সীগঞ্জে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ট্রাকে আলু বিক্রি

বেড়েছে ক্রেতা

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মাসুদ রানা, মুন্সীগঞ্জ

কৃষি বিভাগের সর্বশেষ হিসাব মতে, মুন্সীগঞ্জ জেলার ৬৩টি হিমাগারে বর্তমানে খাবার আলু সংরক্ষিত রয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৯ মেট্রিক টন। বীজ আলু রয়েছে ৭৬ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন। জেলায় এ বছর মোট আলুর ফলন হয়েছে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৩ মেট্রিক টন।

এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন আলু খাবারের জন্য বিক্রয় হয়েছে। অবশিষ্ট মাত্র সোয়া ১ লাখ মেট্রিক টন আলু দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জসহ সারাদেশের ভোক্তা পর্যায়ে আলুর চাহিদা পূরণে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জেলার হিমাগার মালিক, ব্যবসায়ী ও কৃষকসহ আলুভিত্তিক চাষের উপর নির্ভরশীল সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা পর্যায়ে আলু ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে আগের ৪৫ টাকা দড়েই। তবে হিমাগারগুলো থেকে ৩০ টাকা দড়েই আলু বের হচ্ছে বলে হিমাগার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। হিমাগার মালিকদের দাবি, হিমাগার থেকে ২৭ থেকে ৩০ টাকায় আলু বের হলেও খুচরা পর্যায়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরাই অতিরিক্ত মুনাফা করছে। সংকট আসলে সেখানেই তৈরি হচ্ছে।

অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের আঙ্গুল আবার হিমাগার মালিক ও পাইকার আরতদারদের দিকে। তাদের দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই সরকারের বেঁধে দেয়া দামে আমাদের আলু দিচ্ছে না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুন্সীগঞ্জে ৬ উপজেলায় ১০ ট্রাক আলু সরকার নির্ধারিত দরে ৩৬ টাকায় বিক্রয় করা হয়। প্রশাসনের এই আলু সংগ্রহে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

দেওভোগ বাজার থেকে আলু ক্রয় করেছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রশীদ আহমেদ জানান, এভাবে কি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এভাবে বাজার আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে। সারাদেশের মানুষ যাতে আলু ন্যায্য মূল্যে পায়, এই জন্য সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করা দরকার। নইলে আলুর বাজারে আরো সংকট তৈরি হতে পারে। তখন দাম নিয়ন্ত্রণ করা আরো অসম্ভব হয়ে পড়বে। জেলা কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়। গত বছরের তুলনায় এবার ১৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ কম হয়েছে। এই কম আবাদের কারণ হচ্ছে গত ২ বছর আলুতে লোকসান খেয়ে চাষিরা ভুট্রা ও সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, এবার আবাদকৃত জমিতে ১০ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন আলুর ফলন হয়েছে।

জেলার ৬৩টি সচল হিমাগারের মধ্যে আলু মোট ধারণক্ষমতা রয়েছে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন। জেলা কঞ্জুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি জাহাঙ্গীর সরকার মন্টু বলেন, হিমাগারে কৃষকের চেয়ে ব্যবসায়ীরাই আলু রেখেছে বেশি। মুনাফা অতিরিক্ত করা ঠিক না। কৃষক যদি এই অতিরিক্ত মুনাফা পেত, তাহ লেও হত। হিমাগারে আলু মজুতদার ও ব্যবসায়ীরাই বেশি লাভটা নিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীরা যুক্ত রয়েছে। জেলা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের জানান, আমরা হিমাগার ও বাজার দুই স্থানেই অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

যেখানে অনিয়ম দেখছি, সেখানেই জরিমানাসহ দণ্ড প্রদান করা হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি করা না হলে আমাদের অভিযান ও নজরদারী অব্যাহত থাকবে।