নওগাঁয় পানিবন্দি ২০০০ পরিবার

খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার ৪টি উপজেলার ৭টি পয়েন্ট ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার রানীনগর, আত্রাই, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলার বেড়িবাঁধের ৭টি পয়েন্ট এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশ ভেঙে বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির আউশ ও আমন ধান খেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এছাড়া রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে দুইদিন থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দি এসব মানুষদের মাঝে সরকারি সহযোগিতায় চাল, ডালসহ শুকনা খাবার বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। গত বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহৃত থাকায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকছে। পানি ঘরে প্রবেশ করায় ঘরের আসবাবপত্রসহ আরো অনেক কিছু ডুবে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে কেউ উঁচু স্থানে, কেউ বা ঘরের মধ্যে চৌকির ওপর পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনপার করছে।

রান্নার চুলা ডুবে যাওয়ার খাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই বন্যাকবলিতদের এসব মানুষের এলাকায়। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির ও খাবারের। জরুরি প্রয়োজনে একবুক পানি ভেঙে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সাপ- পোকামাকড়ে আতঙ্ক রয়েছেন পানিবন্দি এসব পরিবার। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী। নান্দাইবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন- আত্রাই নদীতে পানি প্রচুর চাপ। গত বুধবার সকাল থেকে রানীনগর-আত্রাই সড়কের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সড়কে পানি যেতে শুরু করে। আমরা গ্রামবাসী মিলে রক্ষা চেষ্টা করেছিলাম। বেলা ১১টার দিকে অবশেষে ভেঙে যায়। এ রাস্তার প্রায় ৫০ ফুট জায়গা ভেঙে ধসে যায়। এতে কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৬০টি মাছের পুকুর শত শত বিঘা জমির আমন খেত তলিয়ে যায়। এখন এ সড়ক দিয়ে কেউ আর যাতায়াত করতে পারছে না। নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, গতকাল থেকেই পানিবন্দি পরিবারের মাঝে সরকারি সহযোগিতায় চালসহ শুকনা খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

খাদ্য সহায়তা বিতরণে জেলা প্রশাসনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হবে। ভাঙন স্থানে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। এছাড়া বন্যাকবলিতদের এরই মধ্যে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরো ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী- বন্যায় জেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর আউশ ও আমনের খেত তলিয়ে গেছে। তবে কি পরিমাণ পুকুর বা মাছের ঘের ভেসে গেছে তা এখনো নিরূপণ করতে পারেনি, জেলা মৎস্য অফিস।