ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাওরে পর্যটক বাড়লেও বাড়ছে পরিবেশ নষ্টের ঝুঁকি

হাওরে পর্যটক বাড়লেও বাড়ছে পরিবেশ নষ্টের ঝুঁকি

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, নিকলী, মিঠামইন ও ইটনা উপজেলার প্রায় সবটুকু এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হাওর। এই হাওর উপভোগ করতে নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা যায় পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণপ্রেমীরা ছুটে আসেন কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে। তবে পর্যটকদের ভিড় বাড়ায় প্রভাব পড়ছে হাওরের পরিবেশের ওপর। বর্তমানে দেশে বেড়েছে হাওর-বাঁওড় কেন্দ্রিক পর্যটন।

সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশাপাশি প্রতিদিন কিশোরগঞ্জের চার উপজেলার হাওরে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। তবে এই পর্যটন শিল্প যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিশাল সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে পরিবেশ নষ্ট হবার ঝুঁকি। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শুকনো মৌসুমে হাওর অঞ্চলের চাষাবাদ। কিশোরগঞ্জের চার উপজেলা নিকলী, ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হাওর এলাকা হিসেবে পরিচিতি। বর্ষায় হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ছুটে আসেন প্রায় অর্ধলাখ প্রকৃতিপ্রেমী। এ হাওরের সৌন্দর্যে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের স্বকীয়তা। ওপরে নিল আকাশ, নিচে বিস্তৃত নিল জল হাওর পর্যটনকে ঘিরে এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জে গড়ে উঠেছে হোটেল-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান। তবে পর্যটন শিল্পের প্রসার হলেও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাওর এলাকার পরিবেশ। শুকনা মৌসুমে চাষাবাদ ব্যাহত করছে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক আর পলিথিন বর্জ্য। সরেজমিন দেখা যায়, প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের প্লেট, ওয়ানটাইম বিরিয়ানির প্যাকেট, কফির কাপসহ অপচনশীল বিভিন্ন পলিথিন। তাছাড়া এই পর্যটনীয় এলাকায় ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা নদীর বুকে ভাসছে এতে হারাচ্ছে হাওরের সৌন্দর্য। নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকার স্পিডবোটের চালক বলেন, বেড়িবাঁধ এলাকায় যেভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে তাতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয় তাহলে সবার জন্যই ভালো। পরিচ্ছন্ন থাকলে পর্যটকদের জন্যও ভালো। পরিবেশবাদী সংগঠন বিডি ক্লিনের কিশোরগঞ্জ শাখার উপ-সমন্বয়ক সুপ্রতিক সরকার উৎস বলেন, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে আমরাই পরিবেশকে ধ্বংস করছি, এই বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। হাওরে যদি সৌন্দর্যতা ধরে রাখতে চাই তাহলে পরিচ্ছন্নতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, হাওরে যত্রতত্র ময়লা ফেলার এই বিষয়টি নতুন কিছু নয়, আমরা হাওরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি ডাস্টবিনও দেওয়া আছে। নিকলী সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম বলেন, এই বেড়িবাঁধ এলাকায় কখনোই ডাস্টবিন দেওয়া হয়নি। মানুষ যে যেভাবে পারে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলছে। মাঝে মাঝে ইউএনও স্যার অভিযান চালায় তখন আমরাও যাই কিন্তু তারপর আবার সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে। এই বিষয় স্থানীয় মেম্বার আরো বলেন, ভবিষ্যতে পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে কি না সেটা চেয়ারম্যান সাহেব বলতে পারেন। নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকায় ওভাবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। গত বছর আমার গ্রাম পুলিশ ও লেবারের মাধ্যমে একবার পরিচ্ছন্ন করেছিলাম। তাছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমি পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমে যাচ্ছি না। আমি গত মাসেও উপজেলার আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বেড়িবাঁধ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে উপস্থাপন করেছি কিন্তু এই বিষয়টি আমি একা বললে তো হবে না। তিনি আরো বলেন, গত ৩ বছর আগে আমি কিছু ড্রাম্প কেটে ডাস্টবিন বসিয়েছিলাম কিন্তু কিছুদিন পর কে বা কারা সেটি চুরি করে নিয়ে যায়। তাছাড়া জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়নি। শুকনো মৌসুমে প্লাস্টিকের বর্জ্যরে জন্য কৃষকদের কৃষি কাজে সমস্যা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত