সারা দেশে ৫০টি উপজেলায় উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্প (সংশোধিত-১) এর আওতায় কালীগঞ্জ উপজেলায় উন্নত জাতের পাটের বীজ উৎপাদনের জন্য ৭৫ জন কৃষক নিজ নিজ জমিতে পাটের বীজ উৎপাদন করছেন। বীজ উৎপাদনকারী কৃষকদের উপজেলা পাট অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিজন কৃষককে ৫ কেজি ইউরিয়া, ৩ কেজি টিএসপি, এক কেজি এমওপি এবং চার কেজি জিপসাম সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। বাংলা ভাদ্র মাস থেকে কৃষক মাঠে পাটবীজ বপন শুরু করে। পাটবীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে চারা রোপণ ও ছেটানো পদ্ধতিতে ১০০-১২০ দিনের মধ্যে পাটবীজ সংগ্রহ করা যায়। বিঘাপ্রতি বীজের ফলন ১৫০ কেজি থেকে ১৮০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। কৃষকদের উৎপাদিত এই পাটবীজ উপজেলা পাট অফিস থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্য ২০০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে। ক্রয়কৃত এসব বীজ আবার উপজেলার প্রকল্পের তালিকাভুক্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এক বিঘা জমিতে একজন কৃষকের পাটবীজ উৎপাদনে খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। কৃষক এই খরচে বিঘাপ্রতি ৩০ হাজার থেকে ৩৬ হাজার পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী গ্রামের মৃত বাবর আলী ছেলে মোহাম্মদ ওমর ফারুক তার ৬৬ শতাংশ জমিতে পাটের বীজ বপন করেন। এই কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়মিত পাটের বীজ উৎপাদন করি। এতে করে অনেক লাভ হয়। গত বছর আমি সেরা পাটবীজ উৎপাদকারী কৃষক হিসেবে জেলা পাট অধিদপ্তর থেকে পুরস্কৃত হই। এখন আমার দেখাদেখি অনেক কৃষক পাটবীজ উৎপাদনে উৎসাহী হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই উপজেলায় ৩৩ একর জমিতে ৩ টন পাটবীজ ক্রয় করার মধ্য দিয়ে সারা দেশের পাটবীজ উৎপাদনকারী উপজেলাগুলো থেকে এগিয়ে ছিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা পাট অফিস। উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক হোসেন জানান, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের নিম্ন জাতের পাটবীজ ক্রয়ে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে দেশীয় উন্নত জাতের পাটবীজ উৎপাদন করে তাদের পাট চাষে স্বাবলম্বী হাওয়া এবং দেশের সোনালী আঁশের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করাই পাট বীজ উৎপাদন প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য। এর মধ্য দিয়ে একদিকে সরকারের পাটবীজ আমদানির পরিমাণ কমছে অন্যদিকে কৃষক লাভবান হচ্ছে। একই সঙ্গে পাট বীজে দেশ স্বাবলম্বী হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ৫ থেকে ৭ টন পাটবীজ উৎপাদন হবে বলে আমি আশাবাদী।
