পঞ্চগড়ের কাঞ্চনজঙ্ঘায় মুগ্ধ পর্যটকরা

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়

পৃথিবীর সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ যেন আকাশ ছুঁয়ে দেয়। মেঘমুক্ত আকাশে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার নানা রূপ। হেমন্তের ঝকঝকে নীল আকাশে দৃশ্যমান হয় হিমালয়ের বরফে টুপি পরা অপরূপ ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’।

প্রতিবছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসেন অসংখ্য পর্যটক। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তের বুক চিরে প্রবাহিত নদীগুলোও বিভিন্ন ঋতুতে রূপ বদলায়। মহানন্দাও এর একটি। মহানন্দার তীরে দাঁড়িয়ে অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘায় মুগ্ধ হন পর্যটকরা। কাঞ্চনজঙ্ঘার অবস্থান: কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ নেপাল ও ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত।

বাংলাদেশের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন (স্থলবন্দর) থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার। ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার। হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। পৃথিবীতে উচ্চতার দিক থেকে প্রথম তিনটি পর্বতই হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত। প্রথম অবস্থানে রয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পর্বত কে-টুর উচ্চতা ৮ হাজার ৬১১ মিটার বা ২৮ হাজার ২৫১ ফুট।

এর পরই অবস্থান ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার উঁচু কাঞ্চনজঙ্ঘার। কাঞ্চনজঙ্ঘায় কেন এতো আকর্ষণ: মোহনীয় রূপে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা পর্যটকদের দৃষ্টিতে- এ এক দারুণ অনুভূতি। কারণ ক্ষণে ক্ষণে বদলায় এর রং। ভোরে সূর্যোদয়ের সময় মনে হয় যেন কাঞ্চনজঙ্ঘার সাদা বরফ সোনায় ছেয়ে গেছে। কারণ দিনের প্রথম সূর্যকিরণ বরফে এমনভাবে প্রতিফলিত হয় তা দেখতে যেন সোনার পাহাড়। বেলা বাড়লে আবার সেই রূপ বদলায়। উত্তরের এ জেলাজুড়ে আছে পর্যটনের আরো যেসব রসদ: কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ পর্যটনে বড়মাত্রা যুক্ত করলে পঞ্চগড়ের প্রকৃতিজুড়ে রয়েছে পর্যটনের নানা রসদ। প্রাচীন স্থাপনা, প্রত্ন পর্যটন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, পু-, গুপ্ত, পাল, সেন ও মুসলিম শাসনামলের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এ জেলা। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। দেশের একমাত্র চার দেশীয় স্থলবন্দর এ জেলায়।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ও জিরো পয়েন্ট, বিজিবি-বিএসফের জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনি, ইংরেজ আমলে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, সমতল ভূমির চা-বাগান, টিউলিপ গার্ডেন, আনন্দধারা পার্ক, ভিতরগড় দুর্গনগরী, মহারাজা দিঘি, পাথরের জাদুঘর, মোগল স্থাপনা মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বোদেশ্বরী পীঠ মন্দিরসহ বিভিন্ন ঐতিহ্য নিয়ে পর্যটনে সমৃদ্ধ এ জেলা। পর্যটনের সব উপাদান মিলে অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে দিন দিন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পঞ্চগড়ের কদর বাড়ছে। গড়ে উঠেছে আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট: কাঞ্চনজঙ্ঘা ও জেলার পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। গত কয়েক বছরে তেঁতুলিয়ায় গড়ে ওঠা ইএসডিওর মহানন্দা কটেজ, কাজী ব্রাদার্স, স্কয়ার আবাসিক, আবাসিক দোয়েল, সীমান্তের পাড়, আবাসিক কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ বেশ কিছু আবাসিক হোটেল পর্যটকদের সেবা দিচ্ছে। সরকারিভাবে রয়েছে আবাসন ব্যবস্থা। রেস্টুরেন্টের মধ্যে বাংলা, নুরজাহান, জান্নাত, ভাইভাইসহ অনেক হোটেল গড়ে উঠেছে। পর্যটকসেবা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা: কাঞ্চনজঙ্ঘা ও জেলার পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। এছাড়া জেলায় পর্যটকদের সেবা দিচ্ছে পর্যটনসেবা প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও পর্যটকদের নির্ভিঘেœ ভ্রমণের জন্য নিরাপত্তাসহ যাবতীয় সেবা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। সম্প্রতি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় স্থাপিত হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোন। পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ তাদের সমস্যা নিরসনে তারা কাজ করছে। পর্যটনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি: জেলার পর্যটন ঘিরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে এ জেলায়। বিশেষ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসজুড়ে পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত থাকে তেঁতুলিয়া। এতে ব্যস্ততা বেড়ে যায় হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে। গতি পায় তিন চাকার ভ্যান আর অটোরিকশার মতো যানগুলোও। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বী বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্ঘ দেখতে হেমন্ত-শীত সময়ে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এই সময়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা চমৎকার দেখা যায়। সেই সঙ্গে পঞ্চগড়ের সমতলের চা শিল্পসহ অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে তাদের ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের থাকার জন্য তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে পুরোনো দুটি ভবনের পাশাপাশি বেরং কমপ্লেক্স নামে নতুন আরেকটি বাংলো নির্মাণ করা হয়েছে। আশাকরি পর্যটকরা পঞ্চগড়ে তাদের ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।