ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পঞ্চগড়ে দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর

পঞ্চগড়ে দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর

প্রাচীন রকমারি পাথরে সমৃদ্ধ দেশের একমাত্র জাদুঘরটি অবস্থিত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। এসব পাথরের বুকে রয়েছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। উত্তরের পর্যটন নগরীতে যে কেউ ভ্রমণে এলে এ জাদুঘরটি দেখে যান তারা। অনেকে দেখার জন্য ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। পঞ্চগড়ের সরকারি মহিলা কলেজে ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত এ পাথরের জাদুঘরটি। ১৯৯৭ সালে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ব্যতিক্রমী পাথরের জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠাতা করেন পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ নাজমুল হক। এ অঞ্চলের ভূখণ্ডের বয়স নির্ণয়, ভূ-বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধান, প্রাগৈতিহাসিককালের নমুনা সংগ্রহ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পুরাতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয় জাদুঘরটি। রক্স মিউজিয়াম ঘুরে দেখা যায়, এত রয়েছে বিশালাকার সব পাথর। এসব পাথরের নাম ও সংগ্রহ পদ্ধতি লেখা রয়েছে সাইনবোর্ডে। মিউজিয়ামের ভেতর উন্মুক্ত গ্যালারিতে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় পাথর। আগ্নেয়শিলা, পাললিক শিলা ও নুড়ি পাথর, সিলিকা নুড়ি ও সিলিকা বালি, হলুদ ও গাঢ় হলুদ বালি, কাঁচবালি, খনিজ বালি, সাদা মাটি, তরঙ্গায়িত চেপ্টা পাথর, লাইমস্টোন, পলি ও কুমোর মাটি এবং কঠিন শিলা এ রকমের হরেক পাথরের সমারোহ। এসব পাথরের আকৃতিও ভিন্ন। কোনোটি গোল, কোনোটি লম্বা আবার কোনোটি চেপ্টা। এগুলোর অনেক পাথরের গায়ে বিভিন্ন ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন আঁকা। জাদুঘরের ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে জাতিতাত্ত্বিক সংগ্রহশালাও। এতে রয়েছে এ জেলার আদিবাসী, উপজাতিদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, নদীর নিচে-ভূগর্ভে প্রাপ্ত অশ্মীভূত কাঠ, তিনশ’ থেকে ২ হাজার বছরের পুরোনো ইমারতের ইট, পাথরের মূর্তি ও পোড়ামাটির নকশা। এখানে রয়েছে পাথরে খোদিত তীর, ধনুক ও দেবির চোখের চিত্র অঙ্কিত পাথর। জানা যায়, মিউজিয়ামের বেশিরভাগ পাথর জেলার ভিতরগড় দুর্গ ও পাশের অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিতরগড় ছিল তৎকালীন পৃথু রাজার রাজধানী। ১৪০০ বছর আগে এ অঞ্চলের পৃথু রাজা এক ধরনের স্লাব তৈরি করতেন ভবনে ব্যবহারের জন্য। সেই পাথরও রয়েছে এখানে। এসব পাথর খোদাই করে ভবন নির্মাণ করা হতো। রয়েছে গাছের গুঁড়ি থেকে তৈরি হওয়া পাথর, কোয়ার্জাইট শ্রেণির পাথর যা দিয়ে ঠাকুর হিসেবে পূজা করা হতো, কোয়ার্জাইট মার্বেল শ্রেণির পাথর যা সমাধিতে স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া বলেন, এ মিউজিয়ামে পুরাতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এখানে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা নিয়মিত আসছেন। জাদুঘরটিতে সংস্কারের কাজ চলছে। বিশেষ করে কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকে এ মিউজিয়ামটি ঠিকমতো পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারিভাবে যদি মিউজিয়ামটি পরিচালনায় সহায়তা করা হয়, তবে মিউজিয়ামটি আরো ভালো রূপে আনা সম্ভব হবে। তারপরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ লুৎফর রহমান প্রধান বলেন, আমাদের কলেজের এ রক্স মিউজিয়ামটি বাংলাদেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর। এ মিউজিয়ামে রয়েছে হাজার হাজার বছর আগের অনেক পুরোনো জিনিসপত্র। প্রাচীনকালের অনেক পাথরের সংগ্রহ রয়েছে এ জাদুঘরে। যা দেখে শিক্ষার্থীসহ অনেকেই অতীতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছেন। বিশেষ করে প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে যারা লেখাপড়া করেন, গবেষণা করেন তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক ও বিদেশি পর্যটকরাও আসছেন এখানে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত