চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মায় ৪ কিলোমিটারজুড়ে তীব্রভাঙন

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. মসিউর রহমান জেহাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীর ভাঙন আবারো তীব্র রূপ ধারণ করেছে। ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মার গ্রাসে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। পদ্মাপাড়বাসীদের সংকটময় সময়েও ভাঙন প্রতিরোধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয়রা বলছেন, চরাঞ্চলের ভাঙনকবলিত মানুষরা যখন সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, তখনও সংশ্লিষ্ট বিভাগের রহস্যজনক নিরাবতা অবাক করেছে তাদের। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ধুলাউড়ি এলাকা থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দশরশিয়া পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীভাঙন হচ্ছে। নদীর পাড়ের ঘাস, কাশবনসহ অন্যান্য বন উজাড় করে ফেলায় পাড়ের মাটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে পানির তোড়ে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। এবারের নদীভাঙন মৌসুমে নিচের দিকে মাটি দেবে গিয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে নিশিপাড়া চরে স্থানান্তরিত হচ্ছে মানুষ। স্থানীয়দের বলছেন, নদী ভাঙনের হুমকিতে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, দোতলা বিশিষ্ট আশ্রয়ণ কেন্দ্র, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়ণপুর এমএ উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণপুরের বাতাস মোড় বাজার, কয়েক হাজার কৃষকের আবাদি জমিসহ প্রায় ৫ হাজার পদ্মা পাড়ের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি। গত ৩ দিন থেকে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বান্নাপাড়া এলাকায় তীব্রভাঙন শুরু হয়। এতে আবাদি জমিসহ ৩ পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আকস্মিক পদ্মার এ ভাঙনে যারা ভিটামাটি হারিয়েছে তারা অন্যের জমিতে মাথা গুঁজতে ঠাঁই নিয়েছেন। বান্নাপাড়ার বাসিন্দা ইসহাক আলী জানান, পদ্মা নদীতে পানি বাড়লে এবং কমলে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়। টানা ভারী বর্ষণ আর বর্তমানে উজানের ঢলের তোড়ে নদীভাঙন হচ্ছে। প্রতিবছরই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। কিন্তু স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। তিনি আরো বলেন, পদ্মার পাড়ে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। এখানকার বাসিন্দাদের দাবি- ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের। অস্থায়ী জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যবহার করে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয় না। উল্টো নদীভাঙন রোধে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়। নদীভাঙন আতঙ্কে নারায়ণপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয় এবং নারায়ণপুর দারুল হুদা আলিম মাদ্রাসা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, নদীভাঙন আতঙ্কে এ মাদ্রাসাটি স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ আছে। খুব শিগগির মাদ্রাসাটি পাঠদান চালু হবে। নারায়ণপুর ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান বেনজির আহম্মেদ জানান, নদীভাঙন তীব্র হওয়ায় ইউনিয়নের মানুষ খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছেন। মানুষ তাদের কাছে নদী রক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চায়। এই মুহূর্তে ইউনিয়নবাসী কোনো দান নয়, শুধু এলাকা রক্ষায় বাঁধ চায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন ঠেকাতে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। ভাঙনের খবর সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তিনি আরো বলেন, যেসব এলাকায় নদীভাঙন সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো চরাঞ্চল এলাকা। তাৎক্ষণিক অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন ঠেকানো অসম্ভব।