ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টানা বৃষ্টিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন

টানা বৃষ্টিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন

গেল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নাকাল জনজীবন। চলমান এ বৃষ্টি যেন থামছেই না। এদিকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) চুয়াডাঙ্গায় ১০৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবারই রেকর্ড করা হয়েছে ৯৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি। এদিকে টানা বর্ষণে মাঠে থাকা রোপা আমন, মাসকলাই, ডাল, ফুলকপি, শিম, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, পেঁপেসহ বিভিন্ন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একদিকে কৃষি উপকরণের বাড়তি দাম, অন্যদিকে বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়ায় চিন্তায় ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে। পানিতে ডুবে আছে ফসলের খেত। জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর, লক্ষ্মীপুর ও হোগলডাঙ্গা মাঠের মধ্যে চান্দামারি বিলের পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে উঠতি ফসলাদি। এতে পেঁয়াজের বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে ফসলের খেতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে ধান, শাকসবজি ও পেঁয়াজ বীজতলার জমি ডুবুডুবু অবস্থা। জলাবদ্ধতা কয়েকদিন থাকলে মাঠের ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা কৃষকদের। এসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে জুড়ানপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু নিচু এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এছাড়া শত শত বিঘা জমির ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার পথে। জুড়ানপুর গ্রামের কৃষক রিন্টু আলী বলেন, এনজিও থেকে টাকা ঋণ নিয়ে জমিতে আগাম ফুলকপির চাষ করেছি, বৃষ্টিতে সব ফুলকপি তলিয়ে গেছে। এখন এ ঋণের টাকা কীভাবে শোধ দেব, আর সংসার কীভাবে চালাব? আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। কৃষক হামিদুল ইসলামের আক্ষেপ, আমি গরিব মানুষ, পরের দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে লাল শাক ও মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছিলাম। টানা বৃষ্টির ফলে আমার লাল শাক ও মিষ্টি কুমড়া গাছ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মহাজনের টাকা-পয়সা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। একই অবস্থা উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নেও। ওই এলাকার ভগিরথপুর, ছুটিপুর, হেমায়েতপুর, হোগলডাঙ্গার মাঠের ফসলের জমি বৃষ্টিতে ডুবে গেছে। ফসল ডুবে যাওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এসব মাঠেও ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মরিচ, লাউ, পটল, তুলাসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের এ সময়ে কৃষকরা বেজায় খুশি থাকলেও এ বছর নতিপোতা ইউনিয়নের কৃষকদের মুখে হাসি নেই। কারণ শিমে দাম থাকলেও শিম ধরছে না এবার। যে কারণে শিমে লোকসান গুণেও অন্যান্য ফসলে টিকে থাকার চেষ্টা ছিল কৃষকের। কিন্তু ভারী বর্ষণে ডুবে খেত তলিয়ে যাওয়ায় বিপদে তারা। এ অঞ্চলের বেড়বাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, পরের জমি লিজ নিয়ে শিম চাষ করতে গিয়ে এক বিঘা জমিতে লিজমানিসহ প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত খেত থেকে ২ হাজার টাকার শিমও বিক্রি করতে পারিনি। নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়ামিন আলী জানান, আবহাওয়ার কারণে মাঠের কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকার যদি তাদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে কোনো রকমে বাঁচতে পারবেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, টানা বৃষ্টিতে বেশকিছু জমির ধান, সবজি ও পেঁয়াজ বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নিরূপণ করা হয়নি। সরেজমিন গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত