ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যাংকার হতে চায় কালীগঞ্জের প্রতিবন্ধী স্নেহা

ব্যাংকার হতে চায় কালীগঞ্জের প্রতিবন্ধী স্নেহা

প্রতিবন্ধিতা কোনো রোগ নয়, তবুও মানুষ এটাকে রোগ বা ব্যাধি মনে করে। একজন প্রতিবন্ধী যতটা না শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষত বহন করে, তার চেয়ে বেশি ক্ষত দেখা যায় সমাজের চোখে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে দেখলে মানুষ আড়চোখে তাকায়, আহা, উহু করে। অথচ তার সমস্যায় সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। দেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে গেলেও সমাজের মানুষের মন-মানসিকতা এখনো পিছিয়ে রয়েছে। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে তাকে ঘিরে পরিবার ও সমাজের মানুষের আনন্দের কোনো সীমা থাকে না। কিন্তু জন্মের পর যখন তার শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখনই সবার উৎসাহে ভাটা পড়ে। তারপরও শিশুটির প্রাকৃতিক নিয়মে বেড়ে উঠা থেমে থাকে না। আর সবার মতো স্বাভাবিকভাবেই বাঁচতে চাইলেও প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে যুদ্ধ করেই তাকে বাঁচতে হয়, পূরণ করতে হয় তার লালিত স্বপ্ন।

বলছি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের উত্তর খৈকড়া গ্রামের প্রবাসী ছলিমউল্লাহ ও নাছরিন বেগম দম্পতির দশম শ্রেণি পড়ুয়া প্রতিবন্ধী কন্যা স্নেহা আক্তার উর্মীর (১৪) কথা। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও স্নেহা থেমে থাকেনি। হুইল চেয়ারের চাকার গড়গড় আওয়াজের সঙ্গে সে তার জীবনের ছন্দ মিলিয়ে নিয়েছে। স্বপ্ন দেখছে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার। পরিবারের সহযোগিতায় একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো বেড়ে উঠেছে। সমাজের যারা স্নেহার প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকাতো, এখন তারাই স্নেহার প্রশংসা করে। সে শিখিয়েছে কীভাবে নিজেকে বদলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হয়। মেধাবী স্নেহা প্রাইমারি স্কুল থেকেই ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করত এবং পিএসসি পরিক্ষায় জিপিএ-৫ সহ বৃত্তি পেয়েছে। স্নেহার মা নাছরিন বেগম বলেন, জন্মের সময় তার শারীরিক কোনো সমস্যা ছিল না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দু’পায়ে ত্রুটি দেখা দিলেও শরীরের অন্যান্য অংশ স্বাভাবিক ছিল। তাকে ছোট সময় থেকেই ঢাকায় অনেক বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। স্নেহা বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাসিক ৭৫০ টাকা করে বছরে ৯ হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। স্নেহা বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে আমি থেমে থাকিনি। প্রতিদিন হুইল চেয়ারে করে স্কুলে আসা যাওয়া করি। আমার হুইল চেয়ারটি চার্জে চলে। অনেক সময় বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে চার্জ দিতে না পারলে স্কুলে আসা যাওয়া করতে সমস্যায় পড়তে হয়। এতে কষ্ট হলেও কখনো ভেঙে পড়িনি। পরিবারের সহযোগিতা ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চেষ্টা করছি। একটি অতিরিক্ত হুইল চেয়ার হলে ভালো হতো। সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে আমি ব্যাংকার হতে চাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত