চারপাশে গাছগাছালিতে ভরপুর। উপরে টিনের চাল আর চারিদিকে মাটির দেওয়ালের ঘর। এমন মনোরম দৃশ্য গ্রামে সচরাচর এখন আর চোখে পড়ে না। ঐতিহ্যের এই অংশটি ধীরে ধীরে স্থান পাচ্ছে স্মৃতির পাতায়। একসময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ছিল মাটির ঘর। কিন্তু ইট-পাথরের দালানের ভিড়ে তা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের অর্থশালীরা বাপ-দাদার ঐতিহ্য বহনকারী মাটির ঘর ভেঙে লোহা-সিমেন্টের বিলাসবহুল বাড়ি বানানোর দিকে ঝুঁকছেন। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া ও তাড়াশ উপজেলার গ্রামগুলোতে গত কয়েক বছর আগেও নজরে পড়ত মাটির ঘরবাড়ি। তবে এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার এসব মাটির ঘর। রুচির পরিবর্তন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কারণে এখন আর কেউ মাটির ঘরে থাকতে চান না। জানা গেছে, এক সময় রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ও তাড়াশ উপজেলার সিংহভাগ মানুষেরই ছিল মাটির ঘর। এখন সেই দৃশ্য পাল্টে গেছে। বর্তমানে হাতেগোনা কিছু বাড়িতে এখন মাটির ঘর থাকলেও অধিকাংশ বাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা ও সেমিপাকা ঘর। তাড়াশ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, এ উপজেলার যেসব জায়গায় লাল মাটি ও এটেল মাটি পাওয়া যেত সেসব এলাকার লোকজনই বাড়িতে মাটির ঘর বানাতেন। লাল ও এটেল মাটি ভিজিয়ে প্রথমে নরম কাদা-মাটিতে পরিণত করা হতো। সেই নরম কাদা-মাটি দিয়ে তৈরি হতো ২ থেকে ৩ ফুট চওড়া দেওয়াল। প্রতিবার দেওয়াল করে তা পাঁচণ্ডছয় দিন রোদে শুকানো হতো। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১২-১৫ ফুট উঁচু দেওয়াল নির্মাণ করা হতো। পরে দেওয়ালের ওপর টিনের চালা বা ছন দিয়ে ছাউনি তৈরি করা হতো। এতে প্রতিটি ঘর নির্মাণে সময় লাগত দুই থেকে তিন মাস।
রায়গঞ্জ উপজেলার নিমগাছী এলাকার বাবু সেখ বলেন, বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাটির ঘরের ভেতরে ধানের তুষ দিয়ে দেওয়ালে প্রলেপ দেওয়া হতো। বাইরের দিকে দেওয়া হতো চুনের প্রলেপ বা আলকাতরা। যে কারণে বন্যা বা ভূমিকম্প ছাড়া এসব ঘর শত বছর পর্যন্ত টিকে থাকত। উজ্জ্বল কুমার মাহাতো বলেন, মাটির ঘর তৈরির উপযুক্ত সময় কার্তিক মাস। কারণ এ সময় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় মাটির ঘর তৈরি দেখলেও আর চোখে পড়ে না। ওই সময় অনেকেই মাটির ঘর তৈরি করে জীবিকা চালাত। এ প্রসঙ্গে রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমরুল হোসেন তালুকদার ইমন বলেন, সময়ের সঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে। এজন্য মানুষ আর মাটির ঘরে বসবাস করতে চায় না।