ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মরা খালে পরিণত বেতনা নদী

মরা খালে পরিণত বেতনা নদী

পলি জমে ও অবৈধ দখলের কারণে সাতক্ষীরার একমাত্র বাণিজ্যিক নদী হিসেবে খ্যাত বেতনা মরা খালে পরিণত হয়েছে। পানিশূন্য নদীর চরে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হওয়ায় প্রতি বছরই এ জনপদে সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। বেতনা নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে ৪৪ কিলোমিটার খননের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সাতক্ষীরার সদর, কলারোয়া, তালা ও আশাশুনি উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ১ নম্বর পোল্ডারে ৪৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বেতনা নদী অবস্থিত। একসময় বাংলাদেশ, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা নদীপথে এ বেতনা নদী দিয়ে সাতক্ষীরা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় আসতেন ব্যবসাবাণিজ্য করার জন্য। কিন্তু কালক্রমে পলি জমে এবং অবৈধ দখলদারির কারণে সেই নদী আজ মরতে বসেছে। পলিমাটি জমে বেতনার তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে বিলের পানি সংযোগখালের মধ্য দিয়ে নদীতে পড়তে পারে না।

উল্টো নদীর পানি লোকালয়ে বা বিলে এসে পাঁচ মাসের বেশি সময় স্থায়ী জলাবদ্ধতার রূপ নেয়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের নিশিকান্ত ব্যানার্জী, অরুণ সরকার, গোপাল সরকার জানান, ‘বর্ষাকালে সদরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বেতনার অধিকাংশ স্থান সংকুচিত হয়ে কোথাও ১৫ ফুট, আবার কোথাও ১০ ফুট চওড়া রয়েছে। এ ছাড়া সুপারীঘাটা, মাছখোলা, বিনেরপোতা, কুল্যাসহ কয়েকটি ব্রিজ নির্মিত হওয়ায় ওইসব জায়গায় পিলারের গোড়ায় পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।’ বুধহাটা বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কয়েক বছর আগে সাতক্ষীরা থেকে বেতনা নদী দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল নৌকায় আনা-নেওয়া করতাম। বেতনা ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।’ বংশ পরম্পরায় বেতনায় বেড়জাল দিয়ে মাছ ধরে শত শত মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত। নদীটি ভরাট হওয়ায় এখন আর বেশি পানি থাকে না। দিনভর জাল ফেলে রাখলেও কোনো মাছ পড়ে না। তাই বাধ্য হয়ে নৌকা ও জাল বিক্রি করে ভিন্ন পেশায় ঝুঁকছেন তারা। ‘সাতক্ষীরা আদি যমুনা বাঁচাও আন্দোলন’-এর সভাপতি অধ্যক্ষ আশিক এলাহী বলেন, ‘ছোট ছোট খণ্ড খণ্ড করে বেতনা খনন করায় বৃষ্টির পানিতে সেই মাটি পুনরায় নদীতে পড়ছে। এছাড়া দুই পাড়ে ২০-২৫টি ইটভাটা গড়ে ওঠায় খননকাজও বিঘ্নিত হচ্ছে। সঠিক পথে তারা খনন করতে পারছে না। ফলে খনন করে তেমন সুফল মিলবে বলে মনে হচ্ছে না।’ সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার জানান, বেতনাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী খননকাজ চলছে। ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার এরইমধ্যে খনন সম্পন্ন হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে পুরো ৪৪ কিলোমিটার সম্পন্ন হবে এবং খোলপেটুয়া নদীর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী আরিফুর রহমান বলেন, ‘সাতক্ষীরায় বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। বেতনার দুই ধারে যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সেগুলো চিহ্নত করে উচ্ছেদ অভিযান দ্রুত চালানো হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত