ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ধানখেতে ইঁদুরের উৎপাত

দিশাহারা কৃষক
ধানখেতে ইঁদুরের উৎপাত

গাঢ় সবুজে ভরে গেছে নেত্রকোনার আমন ধানের মাঠ। চারপাশে শুধুই সবুজের গালিচা। মাঠজুড়ে এমন দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নেত্রকোনার কৃষকদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ইঁদুরের উৎপাত। জেলায় ইঁদুরের ব্যাপক উপদ্রবে স্বপ্নের আমনখেত টেকানোই দায় হয়ে পড়েছে তাদের। ইঁদুরে আক্রান্ত জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও প্রতিকার মিলছে না। তাই কৃষকরা বাধ্য হয়ে সনাতন পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। জমিতে ব্যবহার করছেন কলাগাছের খোসা, বিভিন্ন কবজ-তাবিজ। সুতোয় পলিথিন বেঁধে জমিতে ঝুলিয়ে রাখছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ ইঁদুর তাড়াতে জমিতে আস্তানা করে বাজাচ্ছেন বাদ্যবাজনা। কৃষকদের এমন দুঃসময়ে কৃষি বিভাগের লোকজনের তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করলেও জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ইঁদুরের আক্রমণ প্রতিরোধে তারা মাঠে কাজ করছে। ইঁদুর নিধনে কৃষকদের নানা রকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ধান উৎপাদনে সমৃদ্ধ জেলা নেত্রকোনায় এ বছর ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল ও স্থানীয় জাতের ধান রয়েছে। এদিকে আবাদকৃত ধানের জমিগুলো বর্তমানে সবুজে ভরে উঠেছে। গাছে বের হতে শুরু করেছে থোড়। এমন সময় খেতের কাঁচা ধানে ইঁদুরের আক্রমণ শুরু হওয়ায় কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে। কাঁচা ধানের গাছ ইঁদুর কেটে দেওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ইঁদুরের আক্রমণ সদর উপজেলা, বারহাট্রা, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা ও কেন্দুয়া উপজেলায় বেশি। তবে অন্য উপজেলাগুলোর কিছু এলাকাতেও ইঁদুরের উৎপাত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জেলার কেন্দুয়া উপজেলার তুরুকপাড়া গ্রামের কৃষক আবু সাদেক বলেন, ফসলের জন্য ইঁদুর খুবই ক্ষতিকর। ইঁদুর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত আমন ধানের খেতগুলো দেখলে মনে হবে. কেউ যেন ধারালো কাঁচি দিয়ে কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। ইঁদুরের আক্রমণ বন্ধ করতে ধানখেতে বিভিন্ন ওষুধ দিয়েছি। খুব একটা কাজ হচ্ছে না। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। জেলার কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, ওষুধে কাজ না হওয়ায় ক্ষেতে কলাগাছের খোসা দিচ্ছি। সুতায় পলিথিন ঝুলিয় দিয়েছি এবং খেতে মাচা বানিয়ে তাতে বসে বাদ্যবাজনা করছি। এতে অনেকটাই ইঁদুরকে সরাতে পারছি। জেলার কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা বলেন, ইঁদুরের উৎপাত প্রতিহত করার জন্য কৃষকদের ধানের জমিতে বিলি করে দিতে, কলাগাছের খোসা দিতে এবং ইঁদুরের গর্তের মুখে কীটনাশক ও গ্যাস ট্যাবলেট দিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, আমরা ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ইঁদুর দমন করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হব। জেলার সদর উপজেলার শিবপুর গ্রামের কৃষক মৌলা মিয়া বলেন, কৃষকদের এমন দুঃসময়ে কৃষি বিভাগের লোকজনের তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। তাই কৃষি বিভাগকে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি। এ বিষয়ে নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা চন্দন কুমার মহাপাত্র বলেন, প্রায় প্রতি আমন মৌসুমেই ফসলি জমিতে ইঁদুরের উৎপাত দেখা দেয় এবং কৃষকের কাঁচা ধান কেটে সাবাড় করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত