৪০ বছরেও নির্মাণ হয়নি বর্জ্য পরিশোধনাগার

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. আরিফুল ইসলাম, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ১৯৮৪ সালে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (বিজিডিসিএল) গ্যাস কূপ থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু করা হয়। ৪০টি বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে করে এ ফিল্ড থেকে উত্তোলনকৃত ডিজেল ও পেট্রোলের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ফিল্ডের বাহিরের একটি পুকুরে। বছরের পর বছর এ পুকুরে বর্জ্য ফেলায় জনস্বাস্থ্য ও কৃষি জমি ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বর্ষা মৌসুমে পুকুরে ফেলা বর্জ্য এলাকার খাল ও বিভিন্ন পুকুরে মিলিত হচ্ছে। আর দুর্গন্ধযুক্ত খালের কালচে পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করায় নষ্ট হচ্ছে ফসল। মারাত্মক দূষণের কারণে এলাকার পুকুর-জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। আর খালের পানিতে মেশা বর্জ্যের দুর্গন্ধে এলাকার মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। গ্যাস ফিল্ডে বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখেও পড়েছে এই এলাকার জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ অধিদপ্তর আইনে বলা হয়েছে, প্রতিটি কলকারখানার কেমিক্যালযুক্ত এই বর্জ্য-পানি পরিশোধন করতে হবে এবং পরিশোধনকৃত পানি আবার কাজে লাগাতে হবে। এজন্য ব্যবহার করতে হবে তরল পানি বর্জ্য শোধনাগার বা অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি)। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে এই ইটিপি প্ল্যান্ট না থাকার কারণে বছরের পর বছর দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, তিতাস ও হবিগঞ্জের মতো ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে। ১৯৮৪ সালে বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র হতে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, বাখরাবাদ ফিল্ডের মোট উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ ১,৩৮৭ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)।

গ্যাসের উপজাত হিসেবে দৈনিক প্রায় ৩৬.৮৩ ব্যারেল কনডেনসেট (জ্বালানি তেলের) উপাধান উৎপাদিত হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ গ্যাস ক্ষেত্রে কনডেনসেট ও গ্যাসের গড় অনুপাত এবং পানি ও গ্যাসের গড় অনুপাত যথাক্রমে ১.১৫৫ ব্যারেল মিলিয়ন ঘনফুট এবং ৯.৯২৫ ব্যারেল মিলিয়ন ঘনফুট ছিল। এখানকার কনডেনসেট (তেলের উপাধান) প্রক্রিয়াজাত করে পেট্রোল ও ডিজেল তৈরি করা হয়। যা মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড বাজারজাত করে থাকে। বাখরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. খোকন বলেন, গ্যাস ফিল্ডের পশে আমার বাড়ি। বাখরাবাদ ফিল্ডের পশের একটি পুকুরে পানি বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ওই বর্জ্যরে পুকুরের পানির দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষ অতিষ্ঠ। এখানে যে পুকুরটিতে পানি বর্জ্য ফেলা হয় সে পানির দুর্গন্ধে আশপাশে পশুপাখিও যেতে পারে না। বর্ষা মৌসুমে এ বর্জ্য পানি আশপাশের পুকুরের পানিতে মিশ্রিত হয়ে স্থানীয়দের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জিয়াউল কবীর বলেন, আমাদের ফিল্ডের বর্জ্য পরিশোধন হয়ে পুকুরে যায়। যে পুকুরটিতে বর্জ্য ফেলা হয় সেটি আমাদের নিজস্ব পুকুর। ওই পুকুরটির চারপাশে আরসিসি পেলাসাইডিং ওয়াল নির্মাণ করা আছে। যার কারণে পুকুরের বর্জ্য অন্য কোনো পুকুরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া আমরা ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। শিগগিরই টেন্ডারের মাধ্যমে ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মোছাব্বের হোসেন মো. রাজিব বলেন, পুকুরে পানি বর্জ্য ফেলার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়টি নিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।