ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কালীগঞ্জে সিজারের পর গৃহবধূর মৃত্যু

কালীগঞ্জে সিজারের পর গৃহবধূর মৃত্যু

ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ মেন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের কয়েকদিনের মাথায় মৃত্যু হলো মায়ের। সরজমিনে ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠান ভরা মানুষের ভিড়। একপাশে খাটিয়ায় কাফনে পেঁচানো মায়ের মৃত্যু দেহ। দোচালা জীর্ণশীর্ণ বাড়িটিতে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী ও আশপাশের গ্রামের মানুষের ভিড় জমেছে শেষবারের মতো মরা মুখখানি দেখতে। মৃত্যের শিওরে দাঁড়িয়ে আছে তার বোন। যার কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মৃত পাপিয়া খাতুন এর জন্ম দেওয়া ১৮ দিন বয়সি ফুটফুটে কন্যা আরিফা খাতুন।

হতভাগা এই নবজাতক জানে না চিরদিনের জন্য মমতাময়ী মাকে সে হারিয়ে ফেলেছে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের আর্তনাদে ওই বাড়ির বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঘিঘাটি গ্রামের আরাফাত ইসলামের মেয়ের সঙ্গে। দিনমজুর বাবা বছর দেড়েক আগে রায়গ্রাম ইউনিয়নের ভাটাডাঙ্গা গ্রামের মইদুল ইসলামের সঙ্গে তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের কয়েক মাস পরেই সংবাদ আসে পাপিয়া মা হবেন। পরিবারটিতে খুশির বন্যা বয়ে যায়। অনাগত সন্তানকে জন্ম দিতে পাপিয়া খাতুনকে নেওয়া হয় ফাতেমা ক্লিনিকে। ওই ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা ডাক্তার শারমিন আক্তারের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় ফুটফুটে কন্যা সন্তানের। অপারেশনের পর থেকেই পাপিয়া খাতুনের পেট ফুলতে থাকে। দিন যতই যায়, ততই যেন আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে গেলে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে রেফার্ড করে খুলনা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ অক্টোবর রাতে পাপিয়া খাতুনের মৃত্যু হয়। গতকাল দুপুরে বাবার বাড়ি পাপিয়া খাতুন এর নামাজের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। পাপিয়া খাতুনের স্বামী আরাফাত ইসলাম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ফাতেমা ক্লিনিকে সিজার করার পর থেকে আমার বউ সুস্থ হয়নি। দুইদিন পর থেকে আমার বউয়ের পেট ফুলতে থাকে। এ সময় ক্লিনিকে যোগাযোগ করা হলে, তারা জানায় রোগীর পেটে গ্যাসের কারণে এরকম হচ্ছে। গ্যাসের জন্য চিকিৎসা করলেও অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে আমরা খুলনা পর্যন্ত নিয়ে যাই রোগীকে। খুলনার বড় ডাক্তাররা বলেছে, সিজারের সময় নাড়ি কাটা এবং পেটের মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে নাকি রোগীর এই অবস্থা হয়েছে। কালীগঞ্জ ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তার শারমিন আক্তার পাপিয়া খাতুনের সিজারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি যখন সিজার করেছি তখন রোগী ভালো ছিল, সব রিপোর্টও ভালো ছিল। পরবর্তীতে রোগীর কি অবস্থা এবং কি ঘটেছে, তার কিছুই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়নি। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না, খোঁজখবর নিয়ে দেখব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত