৩০০ বছর ধরে লালবর্ণের দেবী দুর্গার পূজা

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের পাঁচগাঁও গ্রামের সাধক স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হয়ে আসছে লালবর্ণের দেবীদুর্গার পূজা। এখানকার দেবীর রং হয় লাল বর্ণের। ফলে পাঁচগাঁও গ্রামের দুর্গাপূজা দেশের অন্য সবখানের চেয়ে আলাদা। প্রতিবছর বাংলাদেশে হাজারো দুর্গা প্রতিমা বিভিন্ন সাজে সাজিয়ে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দেশের একমাত্র প্রায় ৩০০ বছর ধরে লালবর্ণের দুর্গা প্রতিমার পূজা হয় এই পাঁচগাঁও গ্রামে। পূজা পালনকারীরা জানিয়েছেন, দেশের আর কোথাও দেবীদুর্গার রং লাল বর্ণের নেই। শুধু ভারতের আসাম ও কামাক্ষ্যায় লাল বর্ণের প্রতিমা আছে। বৃহত্তর সিলেট ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এমনকি ভারত থেকেও প্রচুর ভক্ত আসেন এই পূজামণ্ডপে। পূজার সপ্তমী থেকে নবমী এই ৩ দিন কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাখ লাখ দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। এলাকায় প্রচলিত আছে, স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সীপদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ। তিনি একবার আসামের কামরূপ-কামাক্ষা বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য ৫ বছরের শিশুকন্যা চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একজন শিশুকন্যা দেন।

সাধক সেই কন্যাকে পূজা দেওয়ার এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে কন্যার রং বদলে লাল হয়ে ওঠে। বিস্মিত সাধক বুঝতে পারেন, কন্যার মধ্যে স্বয়ং দেবী ভর করেছেন। সেই কন্যা তখন সাধককে বলেন, তুমি আমার কাছে বর চাও। সাধক তখন তার কাছে বর চাইলেন। দেবী তখন নির্দেশ দিলেন পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রং লাল হবে। সাধক দেবীকে রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে যেনো দেখা দেন সেই আকুতি জানান। সেই থেকে এখানে লালবর্ণের মূর্তির পূজা হয়ে আসছে। পূজার একপর্যায়ে সাধক দেবীর কাছে আকুতি জানান, তিনি (দেবীদুর্গা) যে এখানে এসেছেন তার প্রমাণ কী? তখন দেবীদুর্গা তার হাতের পাঁচ আঙুলের লাল ছাপ তৎকালীন নির্মিত কাঁচাঘরের বেড়ায় লেপ্টে দেন। দেবীর মাথার স্বর্ণের টিকলি রেখে যান। সেই থেকেই এখানে লাল বর্ণের মূর্তিতে দেবীর পূজা হয়ে আসছে। এমনকি পূজার সময় এখনো রেখে যাওয়া গয়না দেবীদুর্গার প্রতিমাকে পরানো হয়। প্রতি বছর উৎসব মুখর পরিবেশে দেশ-বিদেশ থেকে লাখ লাখ দর্শনার্থীরা আসেন এ মণ্ডপে। এখানে হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের নানা মনস্কামনা নিয়ে ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। পূজার সপ্তমী ও নবমীতে পশুবলিতে হাজারখানেক পাঁঠা, কয়েকটি মহিষ, অগণিত হাঁস ও কবুতর বলি দেওয়া হয়ে থাকে। আবার অনেকেই বস্ত্র, অলঙ্কার নিবেদন করেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ প্রদীপ ও আগরবাতি প্রজ্জ্বলন করেন দেবীর উদ্দেশ্যে। বর্তমানে এই আয়োজনের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন সাধক সর্বানন্দ দাসের বংশধর সঞ্জয় দাস। যিনি পূজা পরিচালনাকারীদের ষষ্ঠ পুরুষ। আলাপকালে সঞ্জয় দাস জানান, ১৪১৫ বঙ্গাব্দে নতুন জায়গায় মন্দির স্থাপন করলেও আগের সেই স্মৃতিচিহ্ন এখন আর নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী মন্দিরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

তবে মন্দির পুড়ে গেলেও দেবীর গহনা অক্ষত আছে। তিনি বলেন, এই পূজা আমাদের পারিবারিক পূজা। তবে দেবীর জাগ্রত উপস্থিতির কারণে প্রতিবছরই লোকসমাগম বাড়ছে। এ জন্য পূজার এই কদিন হিমশিম খেতে হয়। তবে কোনো সমস্যা হয় না। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।