ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেশবপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মীর্জানগর হাম্মামখানা

কেশবপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মীর্জানগর হাম্মামখানা

যশোরের কেশবপুরে কপোতাক্ষ নদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত সবুজের মায়ায় ঘেরা মীর্জানগর গ্রাম। ১৬৪৯ খ্রি. সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে বাংলার সুবেদার শাহ শুজার শ্যালকপুত্র মীর্জা সাফসি খান যশোরের ফৌজদার নিযুক্ত হন। তার নাম অনুসারে এলাকাটির নাম হয় মীর্জানগর। যেখানে তিনি কেল্লাবাড়ি স্থাপন করেন। বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত নবাব বাড়ির হাম্মামখানার অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান, যা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা প্রতিনিয়ত এখানে এসে ভিড় করেন।

এমন কোথাও যদি আপনি ঘুরতে যেতে চান, যেখানে আপনার জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ইতিহাস এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সমাহার থাকবে, তাহলে মির্জানগর হাম্মামখানা থাকবে আপনার পছন্দ তালিকার শীর্ষে। হাম্মাম ফারসি শব্দ, যার অর্থ গোসল করার স্থান। হাম্মামখানা সাধারণ মানুষের কোনো স্নানঘর নয়। এসব স্নানঘর তৈরি করা হতো রাজা-বাদশাদের ব্যবহারের জন্য যেখানে পানি গরম করার ব্যবস্থাও ছিল।

তাছাড়া আরামণ্ডআয়েশের অনেক সুবিধাই ছিল এসব হাম্মামখানায়। মোগল বা প্রাক-মোগল সময়কালে বেশ কিছু হাম্মাম তৈরি করা হয়েছিল যার মধ্যে মীর্জানগরের হাম্মামখানা অন্যতম। চার গম্বুজের এ হাম্মামখানাটি মোগল আমলের চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর পরিচয় বহন করে? আয়তকার এই স্থাপনাটি চার গম্বুজবিশিষ্ট যার চারটি কক্ষ এবং ইট-সুরকির তৈরি বিশাল কূপ রয়েছে। এর উত্তর কোণে রয়েছে একটি ছোট জলাধার, যেখানে পানি ধরে রেখে সেখান থেকে মাটির পাইপের মাধ্যমে ভেতরের গোসলখানার চৌবাচ্চায় পানি সরবরাহ করা হতো। হাম্মামখানার মাঝ বরাবর একটি টানা পাইপ দ্বারা সংযুক্ত চুল্লি দিয়ে পানি গরম করা হতো।

এখানে এলে দর্শনার্থীরা বুঝতে পারবেন তৎকালীন মোগল নবাব কতটা রুচিশীল ছিলেন। হাম্মামখানায় যেতে হলে যশোর থেকে কেশবপুর যাওয়ার সরাসরি গাড়ি রয়েছে। দূরত্ব প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। কেশবপুর পৌঁছানোর পর ভ্যান বা ইজিবাইক নিয়ে মির্জানগর যাওয়া যায়। সরকার ১৯৮০ সালে এ হাম্মামখানাটিকে একটি পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। তবে হতাশার বিষয় এটাই, প্রায় ৪০০ বছরের মোগল আমলের এই স্থাপত্যের অবস্থা বর্তমানে বেশ শোচনীয়।

দেওয়ালের অনেক জায়গায় রং নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি এই ভবনের খিলানগুলোতে স্থানীয়রা তাদের জ্বালানি শুকানোর কাজে ব্যবহার করে। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে এটার সদর দরজা তালাবদ্ধ করে রেখে দর্শনার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। মোগল আমলের বেশিরভাগ নিদর্শন বর্তমানে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই দ্রুত এ হাম্মামখানাটির যথাযথ সংস্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত