ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চিকিৎসক দম্পতির ছাদ যেন বনসাইয়ের রাজ্য

চিকিৎসক দম্পতির ছাদ যেন বনসাইয়ের রাজ্য

ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে গাছপালার দেখা পাওয়া অনেকটা কঠিন হলেও কেউ কেউ গড়ে তুলছেন পছন্দের বাগান। অনেকেই একটু স্বস্তি পেতে নিজের বাড়ির ছাদকে সাজাতে চান হরেক রকম গাছগাছালি দিয়ে। তবে বেশিরভাগ সময়ই কাজের শত ব্যস্ততার কারণে সম্ভব হয় না গাছের যত্ন নেওয়া। কিছুদিনেই যেন হাওয়া হয়ে যায় গাছ লাগানোর শখ।

তবে এর ব্যতিক্রম উদাহরণ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পূর্ব নিমাইকাশারী এলাকার এক চিকিৎসক দম্পতি। কাজের শত ব্যস্ততাকে হার মানিয়ে নিজ বাড়ির ছাদে বনসাইয়ের বাগান গড়ে তুলেছেন দন্ত চিকিৎসক মাহফুজা আক্তার এলিজা ও তার স্বামী মেডিসিন চিকিৎসক ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী। বনসাইয়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সবুজের ছোঁয়ায় জীবনের প্রশান্তি খুঁজতেই এমন উদ্যোগ তাদের। সরেজমিনে দেখা যায়, ছাদবাগানটিতে ৬০-৭০ প্রজাতির প্রায় পাঁচ শতাধিক বনসাই গাছ আছে। এর মধ্যে কিছু বিলুপ্তপ্রায় গাছ যেমন ছাতিম, হিজল, তমাল, অশোক, দুর্লভ নাগলিঙ্গম, আফ্রিকান বাউব, বিভিন্ন প্রজাতির পাইন, জাকারান্ডা, ব্রাশচেরি, ফুকেনটি, পুডুকার্পাস আছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট, ইউফোরবিয়া, অর্কিড, পাম, বাঁশসহ নানা ঔষধি গাছও আছে ছাদবাগানে। জানা যায়, ১০ বছর আগে মাত্র ১ হাজার ৮০০ বর্গফুটের পাঁচতলার ছাদে তৈরি করেন বনসাইয়ের বাগান। শুরুর দিকে গাছপালার পরিমাণ বেশি না ছিল না। বর্তমানে তাদের বাগানে ৬০-৭০ প্রজাতির পাঁচ শতাধিক বনসাই গাছ আছে। যা দেখতে প্রতিদিনই অনেকে ভিড় করছেন।

তবে তা নিয়ে মোটেও বিরক্ত নন এ চিকিৎসক দম্পতি। বরং দর্শনার্থীদের সঙ্গে বনসাইয়ের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পান তারা। বর্তমানে স্থানীয়দের কাছে তারা হয়ে উঠেছেন বৃক্ষপ্রেমী নামে। তাদের দেখাদেখি আশপাশের ভবনের ছাদগুলোতেও বর্তমানে তৈরি হচ্ছে বাগান। রাকিব হাসান নামের ওই এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, প্রায় সময় বাগানটি দেখতে যাই। তাদের দেখাদেখি আমিও একটি বনসাই বাগানের পরিকল্পনা করেছি। ডা. মাহফুজা আক্তার এলিজা বলেন, আমরা দুজনই একসঙ্গে গাছের পরিচর্যা করি। প্রতিদিনই কয়েকবার ছাদে এসে বাগানের যত্ন নেই। বিভিন্ন উপলক্ষে মানুষ গিফট কিনে থাকে কিন্তু আমরা গিফট হিসেবে গাছ দিতে পছন্দ করি। কারণ আমরা দুজনই গাছপালা খুব পছন্দ করি এবং ভালোবাসি। আমাদের এ বনসাই বাগান দেখতে দূরদূরান্ত থেকে অনেক লোকজন আসেন। অনেকেই বনসাই করার পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ নেন আমাদের কাছ থেকে।

ডা. ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ১০ বছর ধরে এই বনসাই নিয়ে কাজ করছি। বর্তমানে বনসাই অনেকটাই বিলুপ্তপ্রায়। এগুলো দীর্ঘদিন কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে যেন পরিচয় করিয়ে দিতে পারি সেই উদ্দেশ্য কাজ করা। গাছগুলো সহজে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন নার্সারি থেকে সংগ্রহ করতে হয়েছে এবং কিছু গাছ বিভিন্ন পরিত্যক্ত বাড়ি, দেওয়াল থেকে আনতে হয়েছে। বনসাইয়ের মাটিগুলো বিশেষভাবে তৈরি করতে হয়। এটির মাটি এমনভাবেই তৈরি করতে হবে যেন গোড়ায় পানি কিংবা ছত্রাক জমে না থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ সদরের উপ-কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা হাসনাত বলেন, ব্যস্ততম নগরীতে বর্তমানে বনসাইয়ের এমন ছাদবাগান সচরাচর দেখা যায় না। শুধু পরিবেশ রক্ষায় নয় বনসাইয়ে অনেকেই স্বাবলম্বীও হতে পারবেন। সরকার থেকে তাদের কোনো সহযোগিতা করা যায় কি না বিষয়টি আমরা দেখব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত