কালীগঞ্জে দোলনা তৈরি করে সচ্ছলতার ছোঁয়া

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মোহাম্মদ আশরাফুল হক, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)

দোলনা বাচ্চাদের খুবই প্রিয় স্থান। সুতা, কাঠি ও রং দিয়ে নিপুণ হাতে বানানো হয় দোলনা। দোলনায় থাকে বাহারি রঙের সুতার নিপুণ কারুকাজ। প্রাচীনকাল থেকেই শিশুদের ঘুম পাড়ানোর জন্য দোলনার ব্যবহার হয়ে আসছে। নবজাতক ৩-৬ মাস বয়সি শিশুকে হাসিখুশি রাখতে মা-বাবা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। কখনো ঝুনঝুনি বাজিয়ে, লাল-নীল ফুল বা কোনো আকর্ষণীয় বস্তু দেখিয়ে শান্ত রাখতে হয়। কিংবা কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করে শিশুকে আগলে রাখতে হয়। এতেও যদি ছোট্ট শিশুটি আনন্দবোধ না করে তবে দোলনায় তুলে দোলানো হয়। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বাগদী ও বিরতুল গ্রামে বংশ পরস্পরায় আব্দুর রহিম ও তার স্ত্রী জাহানারা, রাজিয়া, হোসনেয়ারা, আইয়ুব খান ও তার স্ত্রী নিলুফাসহ আরো অনেক পরিবার দোলনা বানানো ও বিক্রির পেশা বেছে নিয়েছেন। দোলনা তৈরি করে বিক্রি করাই তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। তারা বলেন, দোলনা তৈরি করা আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। সরেজমিন কালীগঞ্জের বিরতুল ও বাগদী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ বাড়ির বারান্দায়, কেউ বা গাছের ছায়ায় বসে দোলনা তৈরির কাজ করছেন। এসব গ্রামে বাঁশের কাইম ও সুতায় তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হাতে তৈরি রফতানিযোগ্য পণ্য। এসব পণ্য ছাত্রছাত্রী ও গৃহবধূরা উৎপাদন করে বাড়তি উপার্জন করছে। কারিগররা জানান, তারা দিনে গড়ে মাঝারি আকৃতির ছয়টি দোলনা বানাতে পারেন। আকৃতি ভেদে একেকটি দোলনার দাম ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত হয়।

গৃহবধূ ও ছাত্রছাত্রীরা অবসরে দোলনা তৈরির কাজ করে থাকেন। বসে না থেকে তারা দোলনা তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। এ এলাকার অনেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ পেশার সঙ্গে জড়িত। তাদের জানান, বাঁশ ও সুতার তৈরি রফতানিযোগ্য পণ্য গ্রামের বেকার অসহায় পুরুষ ও মহিলাদের স্বাবলম্বি হতে সহযোগিতা করছে। বাড়তি আয় তাদের সংসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাগদী গ্রামের জাহানারা (৩৫) প্রতিবেদককে জানান, দোলনা তৈরি করা তার একমাত্র পেশা। অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকশ’ মানুষ এ কুটির শিল্পের দক্ষ শ্রমিকে পরিণত হয়েছে।

কাজ শিখে এখন দুইটি গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবারের সদস্য এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এ কারণে দিন দিন এ শিল্পের প্রসার ঘটছে। দোলনা তৈরির কারিগর হোসনেয়ারা (৩০) প্রতিবেদককে জানান, দোলনায় থাকে সুতার নানা রঙের কারুকাজ। বিভিন্ন রং দিয়ে সুতাকে করা হয় আকর্ষণীয়। মেয়েদের চুলের বেণীর মতো করে দোলনা তৈরির সুতাগুলোও বেনি করা হয়। এরপর বাঁশের চটির সঙ্গে সুতা বেঁধে তৈরি করা হয় আকষর্ণীয় দোলনা। দোলনা তৈরির আরেক কারিগর ও পাইকারি ক্রেতা আইয়ুব খান প্রতিবেদককে জানান, আমি আমার পরিবার মিলে বিভিন্ন সাইজের দোলনা তৈরি করে থাকি। এছাড়াও বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্রয় করি।

পরে বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, পাবনা, নেত্রকোনা, রংপুর ও চট্টগ্রামসহ রাজধানীর পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। কেউ দোলনা তৈরির অর্ডার দিলে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সরবরাহ করি। প্রতিটি দোলনা আকৃতি ভেদে খুচরা বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।