কষ্টে আছে নিবন্ধনের বাইরে থাকা জেলেরা

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

মা ইলিশ যাতে অবাধে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ সময় জেলেদের টিকে থাকার জন্য মৎস্য বিভাগ প্রণোদনা হিসাবে জেলেদের ২৫ কেজি করে চাল দিচ্ছে। তাও আবার সব জেলে এ চাল পাচ্ছে না। পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ভোলার জেলে পল্লিগুলোতে চলছে চরম হতাশা। বেকার জেলেদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে জেলেদের সংসার জীবন। এ অবস্থায় প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি করছে জেলেরা।

গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছরই সবচেয়ে কম ইলিশ ধরতে পেরেছে জেলেরা। যে কারণে অভাব তাদের পিছু ছাড়েনি কোনোভাবেই। প্রতি বছর এ সময় জেলেরা ইলিশের আয়ে ঘরবাড়ি আর জাল নৌকা তৈরিসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকে অথচ এবছর এ সময় তাদের দিন কাটছে অভাব-অনটন আর ধার-দেনা পরিশোধের দুশ্চিন্তায়। একদিকে মৌসুমে কোনো আয় করতে পারেনি অন্যদিকে এখন চলছে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা, আছে সংসারের ব্যয়, সমিতির ঋণের কিস্তি। অথচ এসবের জোগান দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই জেলেদের। কেউ কেউ প্রণোদনা হিসাবে ২৫ কেজি চাল পেলেও অনেক জেলে কিছুই পাচ্ছে না। টানা ২২ দিন আয় রোজগারহীন জেলে পরিবারগুলোর মাঝে এখন নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। কোনোভাবেই সংসার চালাতে পারছে না তারা। ফলে অনেকেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে ইলিশ শিকারে নামছে। অনেকে আবার নিষেধাজ্ঞা মানলেও সংসার চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে।

এ অবস্থায় প্রণোদনা না বাড়ালে জেলেদের দুর্ভোগের পাশাপাশি সরকারের ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন জেলেরা। ভোলার তুলাতুলি ঘাটের জেলে মো. বশির বলেন, ‘এবারকার সিজনে আমরা যারা জেলেরা আছি নদীতে জাল ফালাইছি ঠিকই কিন্তু কোনো মাছ পাইনি। ধার-দেনা কইরা, দোকানের থেকে বাকি খাইয়া কোনোরকমে সংসার চালাইছি। অহন সরকার দিছে অভিযান আর অভিযানের মধ্যে দিছে ২৫ কেজি চাউল। একটা সংসারের ৬-৭ জন আমাদের খাওয়ার লোক এছাড়া ওষুধসহ অন্যান্য খরচ ২২ দিন কীভাবে আমরা চালাইতে পারি? মো. জসিম মাঝি বলেন, এই ২২ দিনের অভিযানে সরকার আমাগোরে ২৫ কেজি চাউল দিছে। ২৫ কেজি চাউলে কি একটা মানুষের ২২ দিন সংসার চলে? সরকার যদি চাউলের পাশাপাশি আমাদের আরো কিছু দিত তাইলে আমরা একটু ভালোমতো চলতে পারতাম। ইলিশা ঘাটের মো. আল আমিন মাঝি বলেন, সরকার ২২ দিনের অভিযান দিছে, অভিযানের এতদিন শেষ হয়ে গেছে এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কেনো কিছুই পাইনি। ১ কেজি চাউলও পাইলাম না।

তাহলে এই বাইশটা দিন আমরা কীভাবে চলি, কীভাবে থাকি, কেউ আমাদের কোনো খোঁজ-খবরও এখনো পর্যন্ত নেয়নি আর আমরা যদি সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য কইরা নদীতে যাই, তাহলে তো আমাদের জেল-জরিমানা করবো। আমরা বউ-বাচ্চা লইয়া অনেক কষ্টে আছি।’ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ১ লাখ ৬৫ হাজার নিবন্ধিত জেলের মধ্য থেকে ১ লাখ ৩৩ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। যারা নিবন্ধনের বাইরে আছে তাদের নিবন্ধনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রণোদনার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যাতে ব্যর্থ না হয় সেজন্য নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত আছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভোলা জেলার ৭ উপজেলা থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা দেশে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৩ ভাগের ১ ভাগ।