গাছের পোকা বিক্রি করে ভাগ্যবদল

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ক্ষতিকর পোকা গাছ থেকে ছাড়িয়ে তা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষরা। শুনতে অবাক লাগলেও গত দুই বছর ধরে এ পোকা বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন যশোরে মনিরামপুর, কেশবপুর ও ঝিকরগাছার প্রায় শতাধিক মানুষ। শুধুই স্বাবলম্বী নয়, বদলে গেছে অনেকের জীবনমান। পোকার ব্যবসায় দালান বাড়িগাড়িও করেছেন অনেকে। তবে কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামের মানুষের কাছে ভাইরাস নামে পরিচিত এটি মূলত ভাইরাস নয়, এটি লাক্ষা পোকা। যেটি গাছের জন্য স্বল্প মাত্রায় উপকারী এবং বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর। সরেজমিন যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের মানুষরা ভ্যান, লগা, হাঁসুয়া, দা নিয়ে বের হয় পোকা আক্রান্ত গাছের খোঁজে। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম ঘুরে ঘুরে গাছ থেকে পোকা (ভাইরাস) আক্রান্ত ডাল সংগ্রহ করে। এরপর বাড়িতে নিয়ে গেলে নারীরা দা-বটির মাধ্যমে ডাল থেকে পোকা ছাড়িয়ে সাত দিন রোদে শুকায়। গ্রামের নারীরাও প্রতি কেজি পোকা ছাড়ানোর বিনিময়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা পায়। এরপর বিক্রির উপযুক্ত হলে এসব পোকা কেশবপুরের কলাগাছী নামক বাজারে নিয়ে দূরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। পোকা ব্যবসায়ীরা জানান, প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন গাছ পোকা আক্রান্ত হয়। প্রতি মাসে প্রত্যেক ব্যবসায়ী ২ থেকে ৩ মণ পোকা সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। প্রতি কেজি পোকা বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। তবে কখনো কখনো ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন বাগান মালিকের কাছ থেকে পোকা আক্রান্ত গাছ কিনতে হয়। এতে প্রতি কেজি পোকা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মূল্য ধরে গাছ ক্রয় করতে হয়। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের লাভও কম হয়। বিল্লাল সরদার বলেন, কিছুদিন আগে আমার সংসারে খুব অভাব ছিল। হঠাৎ, একজন আমাকে গাছ থেকে পোকা সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য বলে। পোকার ব্যবসায় নেমে কাঙ্ক্ষিত লাভ হয়েছে। মূলত এ ব্যবসায় পুঁজি কম লাগে। লোকসানের শঙ্কাও নেই। বিল্লাল আরো বলেন, পোকার ব্যবসায় আমার মতো অনেকের ভাগ্যবদল হয়েছে। অনেকে বাড়ি গাড়িও করেছেন। তারা এখন পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। মনিরামপুরের নেহালপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজান হোসেন বলেন, আমরা যতদূর জেনেছি যে এই পোকা দিয়ে বিভিন্ন ওষুধ, মোম, আঠা এগুলো তৈরি করা হয়। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদরা বলেছেন, এই পোকা দিয়ে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি হলেও এটি গাছের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়।