মাধবপুরে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্পে অনিয়ম

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  হীরেশ ভট্টাচার্য্য হিরো, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের জন্য নাশতার বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য এবং প্রকল্পের জেন্ডার প্রমোটর, কো-অর্ডিনেটরদের মাধ্যমে জানা যায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে হবিগঞ্জের মাধবপুরের ১১টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় একটি করে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে শিশুদের আবৃত্তি ও সংগী শেখানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ক্লাবের সদস্যদের নাশতার জন্য শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাবে ৩০ জনের জন্য ৩০ টাকা করে নাশতার বরাদ্দ দেওয়া হলেও ২০ টাকার নাশতা সরবরাহ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম থাকলে তাদের বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বছরে দুটি সভার জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা করা হয়নি। এ ছাড়াও, কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মহিলা ইউপি সদস্যদের সম্মানীর টাকাও ঠিকমতো দেওয়া হয়নি। আর এসব অভিযোগ বেশিরভাগই মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা পিয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে। এছাড়া, সরেজমিনে কয়েকটি ক্লাব পরিদর্শনে দেখা যায়, উপস্থিতির হারও খুব কম। প্রতিটি কেন্দ্রে নাশতা সরবরাহ করেন প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত জেন্ডার প্রমোটররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেন্ডার প্রমোটর জানান, প্রতিদিন ৩০ জনের জন্য ৩০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও তাদের অফিস থেকে ২০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। সে জন্য কম মূল্যের খাবার সরবরাহ করেছেন তারা। এক জেন্ডার প্রমোটর বলেন, ‘প্রতিদিন আমাকে একটি করে কেন্দ্রে যেতে হয়। তার জন্য ভাড়া বাবদ আমাকে কোনো টাকা দেওয়া হয় না। ভাড়া বাবদও তো কিছু টাকা লাগে।’ প্রতিটি ক্লাবের কো-অর্ডিনেটর হচ্ছে একজন নারী ইউপি সদস্য।

তাদের সম্মানী হিসেবে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু ইউপি সদস্যদের দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার টাকা। ক্লাবের কো-অর্ডিনেটর চৌমুহনী ইউপি সদস্য রত্না আক্তার জানান, এ পর্যন্ত ৬ হাজার টাকা পেয়েছি, আর কোনো টাকা পাইনি। যোগাযোগ করা হলে বলে টাকা এলে পাবেন। মাধবপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা পিয়ারা বেগম বলেন, ‘উপস্থিতির হার অনুযায়ী সবাইকে নাশতা এবং সম্মানী বিতরণ করি। নাশতার খরচ প্রত্যেককে ২০ টাকা দেওয়া হয়েছে আর ১০ টাকা করে রেখে ভ্যাট এবং হিসাব রক্ষণ অফিসের খরচ বাবদ দেওয়া হয়। ১০ টাকা না রাখলে ভ্যাট আর হিসাবরক্ষণ অফিসের খরচ কোথা থেকে দেব? অন্যান্য আরো খরচ আছে। সেই টাকা কি আমার পকেট থেকে দেব নাকি প্রকল্প থেকে দেব? কো-অর্ডিনেটরদের ভাতা করোনাকালীন থেকে আজ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। একবার তাদের ভাতা পেয়েছি বিতরণও করেছি।’ চৌমুহনী কিশোর-কিশোরী ক্লাবের গানের শিক্ষক সঞ্জয় দত্ত জানান, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবৃত্তি ও গান শেখানো হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে। অনেক কিছু শিখতে পারছে। শিক্ষার্থীদের নাশতার খরচ ২০ টাকা করে দেওয়া হয়। মাধবপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন বলেন, আমাদের অফিসে বিল তুলতে কোনোরকম টাকা লাগে না। আমাদের অফিসে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের নাশতার বরাদ্দের টাকা থেকে কেটে রাখার অভিযোগ মিথ্যা। মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর আহসান জানান, নিয়ম মোতাবেক ক্লাব পরিচালনা ও নিয়মিত পরিদর্শন এর জন্য উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।