ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বোকা বিলে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব

বোকা বিলে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব

ময়মনসিংহের ত্রিশালে বছরের নির্দষ্ট দিনে অনুষ্ঠিত হয় মাছ শিকারের ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব। উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের বোকা বিলে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। গতকাল ভোরে বোকা বিলে গিয়ে দেখা যায় অজস্র মানুষ হই হুল্লুড় করে পলো হাতে মাছ ধরছেন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গেই শুরু হয় উৎসব। শিশু থেকে বুড়ো, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে বিলের চার পাশে বিরাজ করছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। কারো জালে বড় মাছ ধরা পড়লেই স্লোগান আর আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা হয়ে উঠছিল পুরো বিল। মাছ ধরার এ উৎসব চলে দুপুর পর্যন্ত।

প্রতি বছরই স্থানীয় এবং আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে বোকা বিলে পলো উৎসবে যোগ দিতে সমবেত হন কয়েক হাজার মানুষ। পলো বাওয়া উৎসব আয়োজন করে থাকেন স্থানীয় এলাকাবাসী। উৎসবের ঘোষণা দিতে আগের দিন মাইকিং করা হয়। এবারও হয়নি তার ব্যতিক্রম। কয়েকশ’ একর আয়তনের এ বিলে একদিনের জন্য মাছ শিকারে সমবেত হয় কয়েক হাজার মানুষ। ছোট থেকে বড়- সবার হাতেই পলো। কারো হাতে হাতজাল। কেউ এসেছেন একা। কেউ কেউ দল নিয়ে। সবাই মাছ ধরায় ব্যস্ত। শুধু কী মাছ ধরা, মাছ ধরা দেখতে বিলের ধারে ভিড় করেছেন অজস্র নারী-পুরুষ। মাছ ধরতে এসেছেন বৃদ্ধ হেলিম মিয়া, আজিজুর রহমান, আনিছুল মিয়া। কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা জানান, পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখাতেই বহু বছর পর বোকা বিলে বাওয়া উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। মধ্যরাত থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে সবাই। কারণ, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গেই তো শুরু হয়ে যাবে মাছ ধরা। এই আনন্দ-উৎসবে যোগ দেন এ অঞ্চলসহ দূর-দূরান্তের হাজারো মানুষ।

বাওয়ার খবর পেয়ে কারো কারো বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন অনেক আত্মীয়। সকালেই ছোট-বড় সবাই পলো, ছিটকি জাল, উড়াল জাল, লাঠিজাল, হাতজাল নিয়ে মাছ ধরতে নেমেছেন বিলে। এ বিলে পলো বাওয়ায় ধরা পড়ছে শোল, পুঁটি, বাইম, বোয়ালসহ অনেক প্রজাতির দেশি মাছ। পাশের গ্রাম থেকে পলো বাওয়া উৎসব দেখতে এসেছেন কয়েকজন তরুণ। বুলবুল, শাওন, আব্দুল্লাহ, সিমরান, ইফতি সবার বয়সই বিশের কোঠায়। তারা জানাস, আমরা এর আগে এ ধরনের মাছ ধরার উৎসব দেখিনি। দাদা-নানাদের মুখে শুনেছি। ভোর থেকেই হাজার হাজার মানুষের ঢল। আমরা মাছ ধরতে আসিনি, এসেছি দেখতে। আমাদের মতো এমন অনেকে আছে এখানে। শুনেছি অনেক বছরের পুরোনো এ পলো বাওয়া উৎসব। প্রতি বছরই এমন আয়োজন করা উচিত। খুব ভালো লাগছে মাছ ধরা দেখে।

উৎসবের আনন্দ যুবক-বৃদ্ধদের চেয়ে শিশুদের মধ্যেই একটু বেশি। অনেকেই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হাত ধরে উৎসবে শরিক হতে এসেছে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে এলাকার ছোট-বড় সবাই মাছ শিকারের সরঞ্জাম তৈরিতে গত কয়েক দিন ব্যস্ত সময় পার করছে। বাড়িতে আত্মীয় এসেছে বেড়াতে। আমরাও কল্পনা করতে পারিনি এত পরিমাণ লোক হবে। স্কুলের বাচ্চারাও বলছে- স্যার স্কুল বন্ধ দেন মাছ ধরতে যাব!

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত