২০ বছর পর প্রধান শিক্ষকের পদ ফিরে পেলেন আকবর

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়

দীর্ঘ ২০ বছর পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশে প্রধান শিক্ষকের পদ ফিরে পেয়েছেন পঞ্চগড়ের আকবর হোসেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন তিনি। আদালতের নির্দেশে পদ ফিরে পাওয়ায় আকবর হোসেনকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বিদ্যালয়ের সাবেক সহকর্মী শিক্ষক ও স্থানীয়রা। খবরটি জানার পর বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন এলাকার লোকজনও। চলে মিষ্টি বিতরণ। ২০ বছর পর নিজের গড়া বিদ্যালয়ে স্বপদে ফেরার ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। আকবর হোসেন সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের কাপরাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। শিক্ষক আকবর হোসেনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দীঘলগ্রামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৯২ সালে ‘নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ স্থাপন করেন আকবর হোসেন। কয়েক বছরের মধ্যে এমপিওভুক্ত হয় বিদ্যালয়টি। এটি জাতীয়করণ করা হয় ২০১৩ সালে। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের অনেক আগে থেকেই সভাপতি হবিবর রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকায় ষড়যন্ত্রের শিকার হন আকবর হোসেন। ২০০১ সালে স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধের কারণে মামলা হলে সেই মামলায় তিন মাস জেল খাটতে হয় তাকে। পরে সমঝোতার মাধ্যমে তিনি জেল থেকে মুক্তি পেলেও বিদ্যালয়ে যোগদানে বাধা সৃষ্টি হয়। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি সভাপতি হবিবর রহমান। এরপর ২০০৩ সালে আদালতে আদেশাত্মক নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন আকবর হোসেন। মামলায় আদালত আকবরকে স্বপদে বহাল ও তার বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেন। কিন্তু সে আদেশ মানা হয়নি। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্টরা প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেনকে সরিয়ে স্কুলের সভাপতির ভাতিজার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়োগ দেন। এ ঘটনায় মামলা গড়ায় উচ্চ আদালত পর্যন্ত। অবশেষে ২০২২ সালের ১৮ মে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে আয়েশা সিদ্দিকার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পর অবৈধভাবে দেওয়া নিয়োগে পাওয়া আয়েশা সিদ্দিকাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আকবর হোসেনকে বিদ্যালয়ে যোগদান করাতে তালবাহানা শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। পরে উপায় না পেয়ে ২০২২ সালের শেষে দিকে পঞ্চগড় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি জারি মামলা করেন আকবর হোসেন। আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় আদালত গত ২৯ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কারণে গত বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আকবর হোসেনকে যোগদান করিয়ে বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। শিক্ষক আকবর হোসেন বলেন, আমার সবকিছু শেষ করে ফেলেছি মামলার পেছনে। আমি স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছি যে আমাকে যেন পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোতে আর হয়রানি না করা হয়। আকবর হোসেনের ছেলে আবিদ আহসান বলেন, আমার বাবা আবার স্কুলে যেতে পারবেন- এটা বিশ্বাসই হয়নি। দেরিতে হলেও আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পেয়েছি। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, আমি আকবর হোসেনের আইনজীবী হিসেবে লড়েছি। সংশ্লিষ্টরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানায় এই মামলা করা হয়। বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তারা কোনো জবাব না দেওয়ায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা কাগজপত্র যাচাই করে আকবর হোসেনকে বিদ্যালয়ে যোগদান করিয়েছেন। ওই সময়ে আকবর হোসেনকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরখাস্ত করেছিলেন। সেটি অবৈধ হয়েছে, আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও আকবর হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এজন্যই আদালত আকবর হোসেনের পক্ষে আবারো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।