স্বাধীনের সংগ্রহে ২০০ বছরের পুরোনো জিনিসপত্র

৬০ দেশের মুদ্রা

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

দীর্ঘ ২২ বছর ধরে নিজ বাড়িতে ছোট একটি কক্ষে তিল তিল করে জমিয়ে তৈরি করেছেন পুরোনো দিনের জিনিসের সংগ্রহশালা। তার সংগ্রহে রয়েছে ৬০টি দেশের কাগজের নোট ও কয়েন, পুরোনো দিনের গ্রামোফোন, টর্চলাইট, জমিদার বাড়ির বৈঠকখানার হ্যাজাক, লোহার আয়রন, ক্যামেরা, রেডিও, ভিসিআর ক্যাসেট, ঘড়ি, টেপ, দৈনন্দিন ব্যবহারের কাসা পিতল, চিনামাটি, কাচ, মাটি, বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন জিনিস। রয়েছে ১৮০০ সালের ব্রিটিশ কয়েন ও ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের নোট, ডাকটিকিট, লঞ্চের টিকিট। শরীয়তপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাগদী এলাকার মৃত আবুল কালাম সরদার ও খাদিজা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে স্বাধীন। সবসময় পুরোনো দিনের জিনিসের খোঁজ করে চলেন ৩০ বছর বয়সি এ যুবক। ২০০ বছরের পুরোনো মুদ্রা থেকে শুরু টর্চলাইট কী নেই তার সংগ্রহে! পুরোনো দিনের জিনিসপত্র সংগ্রহ করার বিষয়ে স্বাধীন বলেন, ‘এখন আমার একটাই ইচ্ছা এসব পুরোনো জিনিসপত্র দিয়ে নিজের উদ্যোগে ছোট একটি জাদুঘর করতে চাই। যেটা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।’ পুরোনো দিনের জিনিসের নেশায় যে এভাবে মজে থাকা যায়, তা স্বাধীনের ঘরে না ঢুকলে বোঝা যাবে না। দুর্লভ সময়ের জিনিস সংগ্রহ শুধু তার নেশাই নয়, বরং সেগুলো পরম যত্নে আগলে রেখেছেন তিনি। স্বাধীনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে ঢুকতেই দেওয়ালে ঝোলানো বড় আকারের দুটি হরিণের শিং। তার শোবার ঘরে একটি কাঠের আলমারিতে চারটি তাকে খুব যত্ন করে সাজানো পুরোনো দিনের সব তৈজসপত্র। টেলিফোন, শতাধিক বছরের পুরোনো হুক্কা, বিভিন্ন তৈজসপত্র, পুরোনো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রেডিও, টেলিভিশনসহ অন্তত হাজারও সামগ্রী। এছাড়া চারটি ভিন্ন অ্যালবামের মধ্যে রাখা আছে পুরোনো দিনের দেশি-বিদেশি টাকা, কয়েন আর ডাকটিকিট। একেকটি জিনিসপত্র খুব সুন্দরভাবে নেড়েচেড়ে দেখাচ্ছিলেন স্বাধীন। স্বাধীনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা-নোট সংগ্রহ করা শুরু করেন তিনি। বন্ধুদের কাছ থেকে ও খেলার ছলে বিভিন্ন ধরনের পুরোনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে থাকেন। দিন দিন এসবের সংখ্যা যখন বাড়তে শুরু করে তখন থেকে পুরোনো জিনিসের প্রতি একটা ভালোলাগা তৈরি হয় স্বাধীন। এরপর পুরোনো জিনিস সংগ্রহ করার বিষয়ে আত্মীয়ের-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। তাদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ঘরের বৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বাপ-দাদার আমলের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে আসতেন। এছাড়া নিজের ব্যবহৃত খেলনা সামগ্রীগুলোও সংগ্রহ করে রাখেন। তার কাছে কোনো কাগজের টুকরাও ফেলনা ছিল না। প্রতিটি জিনিসের কদর করতেন ভালোভাবে। এভাবেই গড়ে তোলেন একটি সংগ্রহশালা। এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘স্বাধীন নামের ওই যুবক বিভিন্ন দেশের টাকা, মুদ্রা, তৈজসপত্র ছাড়াও আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংগ্রহ করেছেন। ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা ও তিনি যেন তার সংগ্রহশালাটি আরো সমৃদ্ধি করতে পারেন, সেজন্য উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে। সবসময় সহযোগিতা করা হবে।’